পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঋণ করে ও জমি বিক্রির টাকা দিয়ে একে একে তিন ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন মোছা. তেরাবুন বেগম। পরিবারের কিছুটা স্বচ্ছলতাও ফিরতে শুরু করেছিল। কিন্তু পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবের থানাহাজতে বন্দী রয়েছেন তেরাবুনের তিন ছেলে। তাঁদের চিন্তায় দেশে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। ছেলেদের মুক্তির জন্য বিভিন্নজনের কাছে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
তেরাবুন বেগম সিলেট সদর উপজেলার ইসলামগঞ্জ বাজার কালারুকা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর চার ছেলের মধ্যে আবদুর রহমান, রিয়াজ উল্লাহ ও মোহাম্মদ আলী বর্তমানে সৌদি আরবে হাজতে রয়েছেন। অন্য ছেলে বাড়িতেই থাকেন। তিনি অসুস্থ হওয়ায় কাজ তেমন করতে পারেন না।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তেরাবুন বেগমের স্বামী আবদুস সাত্তার প্রায় তিন বছর আগে মারা গেছেন। এরপর বড় ছেলে আবদুর রহমান প্রথমে সৌদি আরব যান। এরপর দুই ভাই রিয়াজ উল্লাহ ও মোহাম্মদ আলীও নিয়ে যান আবদুর রহমান। সেখানে রাজমিস্ত্রিসহ অন্যান্য কাজ করতেন তাঁরা। তিনজন একসঙ্গে সৌদির রিয়াদের হারা এলাকায় থাকতেন। আগে জায়গাজমি থাকলেও তিন ছেলে প্রবাসে যাওয়ার পর তাঁদের আয়ের ওপরই নির্ভরশীল ছিল তেরাবুন বেগমের সংসার। এখন তাঁরা সবাই হাজতে থাকায় পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
স্বজনেরা জানান, সৌদি আরবের হারা এলাকায় গত এপ্রিলে মিছিল করেছিলেন একদল বাংলাদেশি। এর জেরে ১০ এপ্রিল রাতে তিনজনকে আটক করে নিয়ে যায় সৌদি পুলিশ। এর পর থেকে তাঁরা তিনজনই হাজতে রয়েছেন। এর মধ্যে রিয়াজ উল্লাহ আল মালাজ এবং আবদুর রহমান ও মোহাম্মদ আলী আল ওজারত পুলিশ স্টেশনের হাজতে রয়েছেন। তিন ছেলে পুলিশের কাছে আটকের পর থানাহাজত থেকে বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়। এরপর ছেলেদের মুক্ত করতে বিভিন্ন জায়গায় ছুটছেন তেরাবুন বেগম। তিন ছেলের মুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদনও করেছেন তিনি। এর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অ্যান্ড কল্যাণ শাখার মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেছেন। গত মঙ্গলবার আবেদনগুলো দপ্তরে পৌঁছে দেন তিন যুবকের মামা ফখর উদ্দিন।
মুঠোফোনে তেরাবুন বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তিন ছেলেই হাজত থেকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছেন। তাঁদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করছেন। দেশের কারাগারে থাকলে নিজেকে এক ধরনের সান্ত্বনা দেওয়া যেত। দেশের বাইরে তাঁরা কোন অবস্থায় রয়েছেন, সেটিও বেশি ভাবাচ্ছে। ছেলেরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। ছেলেরা লোহার খাঁচায় বন্দী, এমন চিন্তায় গলা দিয়ে খাবারও নামছে না। তিনি ছেলেদের দ্রুত মুক্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর সহযোগিতা চান। কথাগুলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তেরাবুন আরও বলেন, ছেলেদের সৌদি পাঠাতে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ঋণ নিয়েই ছেলেদের পাঠিয়েছেন। এখন তাঁদের দেশে পাঠানো হলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাবে। এরপরও ছেলেদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা করে সম্ভব হলে সেখানে কাজে ফিরিয়ে নেওয়া জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ শাখার পরিচালক লোকমান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এমন একটি আবেদন তাঁরা পেয়েছেন। আবেদনটি রিয়াদ এম্বাসিতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।