বাইরের দেশে গিয়ে পড়াশোনা করে বড় বড় ডিগ্রিধারীদের মতো হওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। দিনশেষে কেউ পারে আবার কেউ কেউ হেরে যায় ভাগ্যের কাছে। অনেকে আবার ভাগ্যের চাইতেও অনেক বেশি হার মানে নিজের করা ভুলের কাছে।
স্কলারশিপ নিয়ে যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে চান তাদের উচিত হবে বেশকিছু কমন এবং গুরুতর ভুলকে না বলা। নিজেরা যাতে সতর্ক থাকতে পারেন তা নিশ্চিতেই স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার আগে কিছু কমন ভুল তুলে ধরলাম। আশা করি মাথায় রাখবেন।
আপনি যেদিন থেকে ভাববেন বিদেশে গিয়ে একদিন পড়বেন সেদিনই আপনার ডকুমেন্টস গোছানোর ডেট। এখন অনেকেই ভাবতে পারেন এতো বছর বা এতো মাস পরের কাজ এতো আগে সেরে কি-ই বা হবে?
হবে বস হবে! যখন স্কলারশিপ ডকুমেন্টস গুছানো শুরু করবেন তখন দেখবেন একটার পর একটার ডকুমেন্টস খুঁজে পাচ্ছেন না। কিছু ডকুমেন্টস হয়তো আপনার স্কুল-কলেজে এখনো পড়ে আছে। আবার কিছু ডকুমেন্টস এখনো অদোরাইজডই হয়নি। যা অদোরাইজ করতে মাসের পর মাস সময় লাগতে পারে।
সুতরাং খুব আগে থেকেই ডকুমেন্টস গোছানোর কাজে লেগে পড়ুন। যত তাড়াতাড়ি এই কাজ শুরু করবেন তত নিজের প্রস্তুতিতে মন দিতে পারবেন এবং গোছানো মনোভাবের কারণে সবসময় ফুরফুরে মেজাজে নিজের বাদবাকি কাজ সেরে নিতে পারবেন। স্কলারশিপের ডকুমেন্টস হিসাবে নিচের বিষয়গুলি মাথায় রাখুন:
আপনার ভোটার আইডি কার্ডসহ আপনার মা-বাবার ভোটার আইডি কার্ড, আপনার জন্ম-নিবন্ধন, আপনার SSC-HSC সার্টিফিকেট, মার্কশিটের মাঝে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা চেক করুন। বিশেষ করে বাংলাদেশের কোনো সার্টিফিকেটে ভুল থাকলে তা সংশোধন করা যে কত ঝামেলার তা তো জানেনই!
সুতরাং নাম, পয়েন্ট, বাড়ির নাম, ঠিকানা, বাবা-মায়ের নাম সবকিছু ঠিক আছে চেক করুন। যদি কোনো ভুল থাকে হাতে সময় নিয়ে ডকুমেন্টস ঠিক করার জন্যে আবেদন করুন৷ মনে রাখবেন বর্তমানে সাধারণত প্রায় ৮০% মানুষের ডকুমেন্টসে ভুল পাওয়া যাচ্ছে।
স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলে আপনাকে ডকুমেন্টারি কাজে নিজেকে পারদর্শী হতে হবে। কম্পিউটার দোকানে গেলাম, আবেদন করলাম…তা হবে না। ল্যাপটপ বা মোবাইলে যেকোনো আবেদন করার অভ্যাস নিজেকেই গড়ে তুলতে হবে।
এক্ষেত্রে কোনো কম্পিউটার দোকানে না গিয়ে নিজের পাসপোর্টের জন্য নিজেই আবেদন করুন। কিভাবে সহজ পদ্ধতিতে ঘরে বসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আমাদের ওয়েবসাইট বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সেই পোস্টের সাহায্য নিন।
অনেক শিক্ষার্থী IELTS কোর্সে বা কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হবার পরি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করে থাকে। যদিও এতে দোষের কিছু নেই। তবে এমনটা না করে হাতে সময় রেখে পাসপোর্ট রেডি করতে হবে। তাছাড়া শুধু IELTS কোর্স করে বিদেশে পড়তে গেলেই যে পাসপোর্ট লাগছে তা কিন্তু নয়।
বরং চিকিৎসা বলুন বা যেকোনো জরুরি কাজ বলুন, মোটামুটি বিদেশের মাটিতে করা সকল কাজেই আপনার পাসপোর্ট লাগবে। সুতরাং সময় থাকতেই অনলাইনেই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন। সেই আবেদন ফরম এবং ডকুমেন্টস নিয়ে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে দেখা করুন এবং পাসপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
যারা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করতে চান তাদের কিন্তু অবশ্যই নিজেদের সার্টিফিকেট শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভেরিফাই করিয়ে নিতে হবে। নতুবা এসব সার্টিফিকেট বা মার্কশিট স্কলারশিপের জন্য এপ্রুভ হবে না। অনেক সময় স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটি থেকেই কাজটা হয়ে থাকে।
তবে যাদের মার্কশিট এখনো ভেরিফাই হয়নি তাদের এই ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করতে হবে। আর অনলাইনে ঘরে বসে সহজেই আপনি এই কাজটি সেরে নিতে পারবেন। কোথাও যেতে হবে না।
আপনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, কিংবা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন! তাই বলে যে পড়াশোনা করা ছাড়া আর কোনো কাজই শিখবেন না… তা কিন্তু হয় না। বিদেশে পড়াশোনা করতে চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের কাজকর্মও নিজেকে করতে জানতে হবে।
বিদেশে যাবার আগে কমন কিছু নিজস্ব কাজ যেমন রান্না করা, কাপড় পরিষ্কার করা, মাছ-মাংস কাটতে পারা এবং রুম গুছিয়ে রাখার মতো কাজগুলি শিখে নিতে পারেন।
পাশাপাশি অন্য কোনো টেকনিক্যাল স্কিল যেমন ইলেক্ট্রিসিটির কাজ, কম্পিউটারের কাজ, অনলাইন কাজের উপর স্কিল ডেভলপ করে নিতে পারেন। এতে করে বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের কোনো অফার পেলেও সেটিও আগ বাড়িয়ে এক্সেপ্ট করা যাবে।
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার আগে কি কি করতে হবে তা নিয়ে লেখা আমাদের আজকের এই গাইডলাইন কোনো এক প্রবাসীর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। যার কারণে এই গাইডলাইন এবং টিপস শতভাগ এফেক্টিভ বলে মনে করি। সুতরাং সময় থাকতে নিজেকে ঝালিয়ে নিন, প্রস্তুত করুন।