পাসপোর্ট তৈরি করতে কি কি কাগজপত্র লাগে জেনে নিন
পৃথিবীর প্রতিটি ব্যাক্তিরই এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বেশ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হিসাবে বিবেচিত হয়। একজন বাংলাদেসী নাগরিক হিসাবেও যেকোনো দেশে ভ্রমণ করতে আপনার প্রয়োজন পড়বে পাসপোর্ট। এই ডকুমেন্টসটি তৈরি করতে আবার বেশকিছু তথ্য এবং কাগজপত্র লাগে। যারা পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে কনফিউশানে ভুগছেন তারা জেনে নিন বাংলাদেশে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সে-সম্পর্কিত তথ্য।
শুরুতেই যে ডকুমেন্টসটি পাসপোর্ট তৈরি করতে লাগবে সেটি হলো জাতীয় পরিচয়পত্র। কারণ এখান থেকে ব্যাক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পাসপোর্টে যোগ করা হবে। সুতরাং যারা ১৮ বছর ক্রস করেছেন এবং এনআইডি কার্ড হাতে পেয়েছেন তারা পাসপোর্ট তৈরি করতে জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে নেবেন৷
বাংলাদেশে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এ সম্পর্কিত আর্টিকেলের এই অংশে জানবো যাদের বয়স ১৮ বছরের কম কিন্তু পাসপোর্ট তৈরি করতেই হবে, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নিয়ে৷ বলছিলাম জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রে কথা। যাদের এনআইডি কার্ড নেই তারা এই সনদপত্রের সাহায্য পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবেন।
৩ নাম্বার পয়েন্টে এসে আপনার লাগবে No Objection Certificate। এটি মূলত কেবলমাত্র সরকারি চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। তবে যারা সরকারি চাকুরি সম্পর্কিত কাজের বাইরে নিজের প্রয়োজন পাসপোর্ট করবেন শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রে এই No Objection Certificate এর প্রয়োজন পড়বে।
অনেকেই আছেন সরকারি চাকরি করছেন এবং চাকরির সুবাদেই আপনাকে বাইরে দেশে যেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়বে Government Order এর। এটিও সরকারি চাকুরিজীবীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস।
যদি আপনার শিশুর জন্যে পাসপোর্ট তৈরি করার প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে শিশুর অভিভাবক হিসাবে বাবা-মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপির প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে এর পাশাপাশি বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রটিও লাগবে।
পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করার পর আবেদনের ফ্রমের একটি পিডিএফ ফাইল ডাইনলোড করে নিতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন শেষ করার পর অনলাইনেই পিডিএফ আকারে এটি সেভ করার অপশন পেয়ে যাবেন৷ মনে রাখবেন এই ডকুমেন্টস কিন্তু বেশ জরুরি একটি ডকুমেন্টস। কারণ পাসপোর্ট অফিসে সর্বপ্রথম এই ডকুমেন্টসটি চাইবে।
আবেদন করা শেষ হলে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পে করতে পারবেন। ব্যাংকে টাকা প্রদান করে টাকা দেওয়ার প্রমাণসরূপ আপনাকে একটি রশিদ সংগ্রহ করে নিতে হবে। পাশাপাশি আপনি চাইলে অনলাইনের বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করেও এই ফি প্রদান করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ডিজিটাল চালান রশিদ সংগ্রহ করে তা পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
মূলত ই-পাসপোর্ট হলো ডিজিটাল স্বাক্ষর চিপে সংরক্ষণ করা একটি ডকুমেন্টস। বর্তমানে বেশকিছু দেশে ই-পাসপোর্টের সাহায্যেই যাওয়া যায়। সাধারণত ৩ ধরণের পাসপোর্টের চল বাংলাদেশে আছে। এর একটি হলো লাল মলাট যা কূটনৈতিক পাসপোর্ট। এটি বিভিন্ন কুটনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ ব্যবহার করতে পারে।
আরেক ধরণের পাসপোর্ট আছে যারা মলাট হয় সাধারণত নীল রঙের। এটি দাপ্তরিক পাসপোর্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং সবশেষে রয়েছে সবুজ মলাট। যা নিয়মিত বা সাধারণ পাসপোর্ট হিসাবে বিবেচিত হয়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেল সাজানো হয়েছে এই সাধারণ পাসপোর্ট সম্পর্কিত তথ্যের সাহায্যে।
আপনি যদি পুরোনো পাসপোর্ট তৈরি না করে বা ব্যবহার করে নতুন ই পাসপোর্ট ব্যবহার করা শুরু করেন সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা হাসিল করে নিতে পারবেন। চলুন এই সুযোগ সুবিধার লোভে পড়ে এক্ষুনি জেনে নিই সহজে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম।
১. লিংকে প্রবেশ করুন: ই পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করার আলাদা লিংক রয়েছে। এখানে ক্লিক করে সেই লিংকে প্রবেশ করুন অথবা যেকোনো ব্রাউজারে https://www.epassport.gov.bd/onboarding লেখাটি পেস্ট করে ওয়েব পেইজটি ওপেন করুন।
২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে নিন: এবারে সাথে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) নিয়ে নিন।
৩. ফরম পূরণ এবং টিপস: এবারে অনলাইনের আবেদন ফরমটি পূরণ করে নিন। উপরে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। সুতরাং এই ফরমে যেসব তথ্যের প্রয়োজন হবে সমস্ত তথ্যই আপনি উক্ত ডকুমেন্টসগুলিতে পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ তথ্য পূরণ করার সময় তারকা চিহ্নিত বক্সগুলি অবশ্যই পূরণ করবেন। সেই সাথে তথ্য সঠিক কিনা তা বারবার চেক করে নিবেন।
৪. ফরম ডাউনলোড: আবেদন করা হয়ে গেলে আপনাকে আবেদন ফরমটির পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নিতে হবে। সেই সাথে অনলাইনে কিংবা ব্যাংকে গিয়ে পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে। পাসপোর্ট তৈরি করতে কত টাকা লাগে সে-সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
৫. ছবি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট: যে ফরমটি ডাউনলোড করেছেন সেই পিডিএফ ফাইলের প্রিন্ট কপি এবং যে পেমেন্ট দিয়েছের সেই পেমেন্টের স্লিপ নিয়ে এবারে আপনাকে যেতে হবে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে। সেখানে গিয়ে ছবি দিন এবং নিজের ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রদান করুন৷
৬. পাসপোর্ট সংগ্রহ: পাসপোর্ট অফিস আপনাকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার নির্দিষ্ট একটি সময় বেঁধে দেবে। আপনাকে সেই সময় অনুযায়ী অফিসে উপস্থিত থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে নিতে হবে।
পাসপোর্ট তৈরি করতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করবে আপনি কতদিনে পাসপোর্ট পেতে চাচ্ছেন তার উপর৷ তবে এই ফি ৪০২৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৩,৮০০/- হতে পারে৷ পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে সে-সম্পর্কে জানতে নিচের ইমেইজটি লক্ষ্য করুন। আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন।
অনেক সময় পাসপোর্ট হারিয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয তথ্য যেমন পাসপোর্ট নাম্বার, আবেদনকারীর জন্মসাল, পাসপোর্ট কিভাবে হারিয়েছে, কবে হারিয়েছে ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে জিডি করতে হবে। যদি জিডি করার পরও পাসপোর্ট না পান সেক্ষেত্রে আপনাকে পুরোনো পাসপোর্টের ফটোকপি সংগ্রহ করে সাথে জিডির ডকুমেন্টস জোগাড় করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
মনে রাখবেন সমস্ত যোগ্য নাগরিকের জন্য ই-পাসপোর্ট ইস্যু করে নেওয়াটা আজকের দিনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেপ। যা না সেরে নিলে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করা অসম্ভব। আর হ্যাঁ। ঝামেলা এড়াতে সাধারণ পাসপোর্ট ব্যবহার না করে আজই তৈরি করে নিন এম্বেসড হলোগ্রাফিক চিত্রসহ একত্রিশটি আলাদা সুরক্ষা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ই-পাসপোর্ট।