তীব্র ভালোবাসা থাকার পরও অনেক সম্পর্ক ভেঙে যায় দুটো কারণে। একটি হলো, সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বাস জন্মে যাওয়া, অপরটি হলো, তাকে যথার্থ সম্মান না দেওয়া।
শুধু ভালোবাসা দিয়ে আজীবন সম্পর্ক অটূট থাকে না। এমন অসংখ্য মানুষ আছে, যারা সঙ্গীর প্রতি দারুণ ভালোবাসা দেখায়, তবে, সেটি স্বৈরাচারী ভালোবাসা। কারণ সে তার সঙ্গীকে ভালোবাসে, অথচ সম্মান দেয় না। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর তাঁর অন্নদামঙ্গলকাব্যে লিখেন, ‘‘বড়র পিরিতি বালির বাঁধ, ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ।’’ এ ধরনের ভালোবাসা আসলে টেকসই হয় না। কারণ প্রতিটি মানুষের মাঝে সহজাত ইগো থাকে। এমনকি একটি শিশুর মাঝেও এই অনুভূতিটা দেখা যায়। যে শিশুটিকে আপনি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন, তাকে অন্য শিশুদের সামনে কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সামনে কোনো যৌক্তিক কারণেও যদি ধমক দেন বা লজ্জা দেন, সে প্রচণ্ড মাইন্ড করে। কারণ এটা তার আত্মসম্মানে আঘাত করে।
আরেকটি বিষয় হলো, লয়ালটি বা আস্থা-বিশ্বাসের অভাব। কোনো কারণে যদি আপনার পক্ষ থেকে মিথ্যা কিংবা প্রতারণা প্রকাশ পায় এবং আপনার জীবনসঙ্গী সেটি জেনে যান, তাহলে আপনি আজীবনের জন্য তার সন্দেহের লিস্টে ঢুকে যাবেন। কখনও সে আপনাকে শতভাগ ট্রাস্ট করতে পারবে না। মন থেকে আপনার প্রতি বিশ্বাসটা আর আসবে না। উপরন্তু এটি তার মনে একটা সন্দেহের বীজ বপন করবে। বিভিন্ন অম্লমধুর পরিস্থিতিতে সেই বীজ ডালপালা বিস্তৃত করবে। তখন সম্পর্কটা হয়ে ওঠবে বিষাক্ত, দম বন্ধ হওয়ার মতো।
তাই, নিজেন স্বামী এবং স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দিন। তার সাথে দ্বিমত করলেও সম্মান রেখে করুন। মতানৈক্য, রাগ কিংবা অভিমানের সময়েও অসম্মান করে বা ছোট করে কথা বলবেন না। কখনও অসম্মান করে ফেললে যদি-কিন্তু-তবের ভনিতা বাদ দিয়ে ভুল স্বীকার করে সরাসরি ক্ষমা চেয়ে নিন।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে জীবনে আছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। জীবনে তিনি একটি মিথ্যা কথাও বলেননি। কেবল যুদ্ধের সময়ে স্ট্র্যাটেজিক কারণে দুয়েকবার শত্রুদের সাথে কথা ঘুরিয়ে বলেছেন। আর তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। কিন্তু তখনই তাঁর কোনো সাহাবিকে ছোট করে বা অসম্মান করে কথা বলেননি। অনেক সময় রাগ করেছেন, ক্রোধান্বিত হয়েছেন, কিন্তু অন্যের মানহানি করেননি।
নুসুস থেকে