জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে, কানাডাকে সেরা দেশগুলির তালিকাতে ফেলা যায়। যারা কানাডায় স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে চান তাদের উচিত কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় লিষ্ট সম্পর্কে আইডিয়া রাখা।
সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন
কানাডার মতো দেশে একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে থাকতে আশা করি এসব বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে শতভাগ সাহায্য করবে।
শুরুতেই বলে রাখি কানাডাতে ব্যবসা, সামাজিক বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, ফার্মা টপিক এবং প্রকৌশল সম্পর্কিত বিষয়গুলি বেশ জনপ্রিয়। এসব বিষয় নিয়ে পড়লে খুব দ্রুত কানাডাতে সেরা মানের একটি ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায়।
তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সময়োপযোগী এবং প্রাসঙ্গিক গবেষণায় ফোকাস করে থাকে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক অভিজ্ঞতা প্রগতিশীল এবং উদ্ভাবনী অনুশীলনের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করে থাকে।
আবার ভাষাগত ক্ষেত্রে, কানাডা একটি বহুসংস্কৃতির দেশ। কানাডাকে বিশ্বের সবচেয়ে ভাষাগত দিক দিয়ে বৈচিত্র্যময় দেশগুলির মধ্যে ধরা হয়ে থাকে। যদিও দেশটি প্রাথমিকভাবে ফরাসি এবং ইংরেজি-ভাষী দেশ।
চলুন এবারে কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় লিষ্ট সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা নেওয়া যাক।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ প্রাপ্ত স্টুডেন্টদের জন্য কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮০ টিরও বেশি প্রোগ্রাম রয়েছে।
ক্যাম্পাসের বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে আছে। রয়েছে ১৮ টির মতো অনুষদ এবং বিভাগ, লাইব্রেরি এবং ক্রীড়া বিষয়ক ভবন রয়েছে। ভার্সিটির প্রতিটা অংশেরই কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ট হাউসের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানও কিন্তু উল্ল্যেখ করার মতো। ইনসুলিন এবং স্টেম সেল গবেষণা, প্রথম ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ এবং প্রথম সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের বিষয়গুলি নিশ্চিত করে এই জনপ্রিয় ক্যাম্পাসের গবেষণা কেন্দ্রটি।
সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার হলো গবেষণা আউটপুটের কারণে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বেসরকারি ও সরকারি খাত থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন পেয়ে থাকে৷ এছাড়াও আন্তর্জাতিকীকরণের পরিপ্রেক্ষিতে, মাধ্যমিক-পরবর্তী র্যাঙ্কিং টরেন্টো-কে বিশ্বের শীর্ষ ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এর মধ্যে রাখা হয়েছে।
কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় লিষ্টের এই অংশে আমরা আলোচনা করবো ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া নিয়ে। ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া। যা কানাডার প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে সুপরিচিত। বিজ্ঞানের বহু-বিষয়ক গবেষণার দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য বজায় রেখে একটি দিনকে দিন নিজের সুনামকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বলে রাখা ভালো পারমাণবিক পদার্থবিদ্যার জন্য অনাল ল্যাবরেটরি, বিশ্বের বৃহত্তম সাইক্লোট্রন এবং কানাডার বৃহত্তম লাইব্রেরি কিন্তু বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলেই আছে।
তাছাড়া কেলোনা ক্যাম্পাসটি সম্প্রতি UBC-এর ক্রমবর্ধমান শিক্ষার সুযোগকে বাড়িয়ে তোলার জন্যে নতুনরূপে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে।
একসাথে ৬৩ টিরও বেশি বেশি স্নাতক এবং স্নাতক প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয় এই ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে।
ক্যাম্পাসে অবস্থিত বহু গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও এতে রয়েছে খাদ্য গবেষণার জন্য একটি ৫৯ একরের খামার, গণতান্ত্রিক অনুশীলন গবেষণার একটি বড়সড় কেন্দ্র এবং আদিবাসী শিক্ষাসহ বেশ কয়েকটি গবেষণা কেন্দ্র।
গবেষণার দক্ষতার কারণে, UBC বিদেশে প্রায় ২০০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের লিষ্টে রয়েছে UC বার্কলে, সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ লন্ডনের মতো জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান।
ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি একজন সফল কুইবেসার ব্যবসায়ী, জেমস ম্যাকগিলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১৮১৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আপনি হয়তো জেনে খুশি হবেন যে কানাডার প্রথম মেডিসিন অনুষদ প্রতিষ্ঠা করেছিল এই ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে রয়েছে ১১ টি প্রধান অনুষদ এবং স্কুল। এখানকার ৩০% শিক্ষার্থীই কিন্তু স্কলারশিপ পেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং, কলা, বিজ্ঞান এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যয়ন করছে।
উইলিয়াম শ্যাটনার, সার্চ ইঞ্জিনের উদ্ভাবক অ্যালান এমপ্টেজ এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মতো জনপ্রিয় ব্যাক্তিদের তৈরিতে কাজ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়াও আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের রেডন, থমাস চ্যাং-এর প্রথম কৃত্রিম কোষ এবং উইলিয়াম চালমারের প্লেক্সিগ্লাস আবিষ্কারের সাথেও জড়িয়ে আছে এই বিশ্বিবদ্যালয়ের নাম।
চলছে কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় লিষ্ট সম্পর্কিত আর্টিকেল এবং এই পর্যায়ে জানবো কানাডার অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে।
ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার উইলিয়াম ম্যাকমাস্টারের অর্থে মূলত এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ব্যবসা, সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, প্রকৌশল, মানবিক শাখা এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো ছয়টি একাডেমিক অনুষদ। বলে রাখা ভালো এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে ম্যাকমাস্টার মডেল অনুসরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৭৮০ বর্গ-মিটার জীববিজ্ঞান গ্রিনহাউস। সেই সাথে আছে একটি ব্রেন ব্যাঙ্ক। যেখানে আলবার্ট আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের একটি অংশ তার সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।
ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি তার গবেষণার জন্য বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য কানাডাসহ সারা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ইউনিভার্সিটি অফ মন্ট্রিল, বা ইউনিভার্সিটি ডি মন্ট্রিল হলো কানাডার এমন একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় যা পুরো দেশে গবেষণা সেক্টরে নেতৃত্ব প্রদান করছে।
বিজনেস স্কুল এইচইসি মন্ট্রিল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল পলিটেকনিক মন্ট্রিলের কতৃক অনুমোদিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন, কাইনেসিওলজি এবং কলা ও বিজ্ঞানসহ চৌদ্দটি অনুষদ এবং বিভাগ।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা কেন্দ্র ফর ডিপ লার্নিং (MILA) ও ইমিউনোলজি এবং ক্যান্সারের জন্য একটি বিশেষ ইনস্টিটিউট। বিশ্বে সেরা স্কলারশিপ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে এটি র্যাঙ্কিংয়ের ৩য় স্থানে অবস্থান করছে৷ বিভিন্ন অনুষদ ছাড়াও এতে রয়েছে মেডিকেল-ডক্টরাল প্রোগ্রাম এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্পর্কিত কোর্সে জয়েন হওয়ার সুযোগ।
এডমন্টনের আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয় হলো আকারে বেশ বড়সড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান মূলত স্নাতক এবং স্নাতক স্তরে অসংখ্য একাডেমিক প্রোগ্রাম অফার করে থাকে।
বর্তমানে ৫ টি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১৮ টি অনুষদ নিয়ে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এর মধ্যে চারটির অবস্থান এডমন্টনে এবং একটি ক্যামরোজে।
ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর জীবাশ্মবিদ্যা, বনবিদ্যা, প্রতিস্থাপন এবং ক্রীড়া-সম্পর্কিত শাখা।
তাছাড়া বিশ্বিবদ্যালয়টিতে ইতিমধ্যেই আদিবাসীদের অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি এবং ভাষা নিয়ে কাজ করে এমন একটি নেটিভ স্টাডিজ ফ্যাকাল্টিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কানডার যে কয়টি বিশ্ববদ্যালয়ের শক্তিশালী গবেষণা ফোকাস রয়েছে তার মধ্যে এই ইউনিভার্সিটি অফ আলবার্টা হলো অন্যতম৷ এর গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে মূলত সামাজিক পরিবর্তন, মানব স্বাস্থ্য, এবং সকলের জন্য জ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কিত মৌলিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
মান এবং অবদানের দিক দিয়ে কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের লিষ্টে আমরা অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেও ফেলতে পারি। এটিকে মূলত ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়া বা ইউনিভার্সিটি ডি’অটোয়া নামে ডাকা হয়ে থাকে।
মূলত ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে রয়েছে মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সামাজিক বিজ্ঞানসহ মোট ১০ টি অনুষদ। এই ১০ টি অনুষদ জুড়ে ৪৫০ টিরও বেশি প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। শুধু তাই নয়, এটি কানাডার বৃহত্তম আইন স্কুল হিসাবেও সুপরিচিত একটি প্রতিষ্ঠান।
আপনি জেনে অবাক হবেন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষার্থীদের ৯৭ শতাংশ কর্মসংস্থানের হার নিয়ে গর্ব করে থাকে। কারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিল্প দক্ষতা শেখার সর্বোত্তম সুযোগ রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। তাছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের সমবায় শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের প্রাসঙ্গিক অর্থপ্রদানের কাজের প্লেসমেন্টের সাথে সঠিক পরিচয় তৈরি করতে সর্বোত্তম সাহায্য করে।
বর্তমানে এই অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে রয়েছে ৪০ টি গবেষণা কেন্দ্র। এসব গবেষণা কেন্দ্র প্রতিবছর স্পনসরড গবেষণা আয় হিসাবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকে। তাছাড়া অটোয়া হেলথ ইনস্টিটিউট এবং ইউনিভার্সিটির হার্ট ইনস্টিটিউট কতৃপক্ষের আন্ডারে মেডিকেল-ডক্টরাল প্রোগ্রামগুলি হয়ে উঠে অধিক মানসম্মত।
কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় লিষ্ট সম্পর্কে জানা তো গেলো! এবারে পছন্দের বিশ্ববদ্যালয়ে প্রোগ্রাম বা ডিগ্রি পছন্দ করে নেবার পালা। ক্যারিয়ার, ইচ্ছা এবং সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করুন। আশা করি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ গর্বিত শিক্ষার্থী হিসেবে কোনো একদিন সফলতার গল্প লেখার সৌভাগ্য আপনারও হবে।