জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৫ জন চেয়ারম্যান হয়েছেন। বাকি ৩৪ জেলায় একতরফা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা ৯ জেলায় হেরেছেন। চাঁদপুরে কাউকে সমর্থন দেয়নি আওয়ামী লীগ।
বিজয়ীদের মধ্যে ছয়জন বিদ্রোহী, একজন জাতীয় পার্টির (জাপা) ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। বিদ্রোহীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা। তাঁরা কোনো না কোনো মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন।
সোমবার দেশের ৫৭ জেলা পরিষদে নির্বাচন হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া চেয়ারম্যানদের জেলাগুলোতে (২৫) সদস্য পদগুলোতে নির্বাচন হয়। এবার সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯ জন। আওয়ামী লীগের বাইরে দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির নেতা দেলওয়ার হোসেন নির্বাচিত হন। ঝিনাইদহে হারুন অর রশিদ এবং পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যবসায়ী জেলা চেম্বারের সভাপতি আব্দুল হান্নান শেখ স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে, বরিশাল সরকারি জিলা স্কুল কেন্দ্রে যান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁর সঙ্গে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রসহ অন্তত চার-পাঁচজন কাউন্সিলর ছিলেন। কেন্দ্রের ১ নম্বর ভোটকক্ষে প্রবেশের সময় বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান মেয়রকে ‘দল বেঁধে’ ভোটকক্ষে প্রবেশ না করতে অনুরোধ করেন। এ সময় ইউএনওর সঙ্গে তাঁর বাগবিতণ্ডা হয়। মেয়র ইউএনওকে ‘স্টুপিডের মতো কথা বলেন কেন’ বলে মন্তব্য করেন বলে ফেসবুক ভিডিওতে দেখা যায়।
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে দিঘাপতিয়া এমকে কলেজ কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তাঁর সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরাও ছিলেন। সিংড়া গোলই আফরোজ ভোটকেন্দ্রে সিংড়া পৌর মেয়র এবং সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ ভোটারদের একটি বড় অংশ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোট দিয়ে বের হয়ে যান তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদরের জিলা স্কুল কেন্দ্রের ফলাফলে পরাজিত সদস্য প্রার্থী মামুনুর রশিদের সমর্থকরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে মহাসড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করে।
কুমিল্লার জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেখতে গিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সামনে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত রাশেদুল ইসলাম (৩৫) উপজেলার সিন্ধুরিয়াপাড়া গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে।
এই নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তাঁদের ভোটে জেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
ভোটে চেয়ারম্যান হলেন যাঁরা : শাহাদাত হোসেন (ফরিদপুর-বিদ্রোহী), শফিকুল মোরশেদ আরজু (রাজবাড়ী), মনির হোসেন ভূঁইয়া (নরসিংদী-বিদ্রোহী), শেখ হারুনুর রশীদ (খুলনা), গোলাম মহিউদ্দীন (মানিকগঞ্জ), আবু বকর সিদ্দিক (গাইবান্ধা), আব্দুল হান্নান শেখ (পঞ্চগড়-স্বতন্ত্র), সাইফুজ্জামান পিকুল (যশোর), ইউসুফ পাঠান (ময়মনসিংহ), অসিত কুমার সরকার (নেত্রকোনা), সুবাস চন্দ্র বোস (নড়াইল), মকবুল হোসেন (বগুড়া), হুমায়ুন কবির (শেরপুর-বিদ্রোহী), নজরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), সাজেদুর রহমান (নাটোর), মোতাহার হোসেন (গাজীপুর), খাজা সামছুল আলম (জয়পুরহাট), মাহফুজুর রহমান মনজু (চুয়াডাঙ্গা), জিল্লুর রহমান (কিশোরগঞ্জ), হাফিজুর রহমান (পটুয়াখালী-বিদ্রোহী), নুরুল হুদা মুকুট (সুনামগঞ্জ-বিদ্রোহী), আব্দুস সালাম (মেহেরপুর), আল মামুন সরকার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু (রংপুর-বিদ্রোহী), মমতাজুল হক (নীলফামারী), মুশফিক হোসেন চৌধুরী (হবিগঞ্জ), ওচমান গণি পাটওয়ারী (চাঁদপুর-উন্মুক্ত), হারুন অর রশীদ (ঝিনাইদহ-স্বতন্ত্র), শাহিনুল হক মার্শাল (কক্সবাজার-বিদ্রোহী), দেলওয়ার হোসেন (দিনাজপুর-জাতীয় পার্টি), পেয়ারুল ইমলাম (চট্টগ্রাম), পঙ্কজ কুমার কুণ্ডু (মাগুরা), সদর উদ্দিন (কুষ্টিয়া), মীর ইকবাল (রাজশাহী)।
যেসব জেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান : কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, ঝালকাঠি, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, নওগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, পিরোজপুর, ফেনী, বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, ভোলা, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ ও সিলেট।