‘চেতনা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চটকদার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করত এই সমিতি।
রাজধানীর মিরপুর থেকে ওই চেতনা নামে সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন (৫৪) ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব)।
রবিবার সমিতির প্রতারিত গ্রাহকরা মিরপুরে মানববন্ধন করেন। ৫৬০ জন ভুক্তভোগী র্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর র্যাব অভিযানে নামে। ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের আগে সমিতির সঙ্গে জড়িত আরো কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে তারা।
গ্রাহকদের কাছ থেকে জানা যায়, লাখে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় চার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়।
ঢাকা জেলার সমবায় কর্মকর্তার অডিট অনুযায়ী গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী সমিতির তহবিলে মাত্র ৫৪ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং এর বিপরীতে রয়েছে ৭০ কোটি টাকার বেশি ঋণ।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুজন জিজ্ঞাসাবাদে জানান যে ৩৭ বছর আগে এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৮৩। প্রথম দিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্প আয়ের মানুষকে বেশ মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণের প্রতি আকৃষ্ট করতেন তাঁরা। এরপর বড় পরিসরে ব্যবসা শুরু করে গার্মেন্টকর্মী, রিকশাচালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে লক্ষ্য করে কাজ চালাতে থাকেন তাঁরা। ১৮-৩০ শতাংশ হারে মুনাফা এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হতো। তিন-চার মাস আগে হঠাৎ অফিসে তালা লাগিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
র্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, সভাপতি জাকির ১৯৯৩ সালে চেতনায় সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নামে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে একাধিক ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমকম সম্পন্ন করার পর রাজধানী ঢাকার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তিনি ২০২১ সালে সমিতির সহসভাপতি এবং গত জানুয়ারি থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রাজধানীর গুলশান-নিকেতনে নিজের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। এ ছাড়া তার নামে-বেনামে অনেক সম্পদ রয়েছে।
সূত্র জানায়, পাঁচটি নামসর্বস্ব কম্পানি পরিচালনা করছিলেন অভিযুক্তরা। প্রতিষ্ঠানের নামে বর্তমানে মিরপুরের ৬০ ফিটে চেতনা টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট, বর্তমান অফিস চেতনা কুঠিরে তিনটি ফ্লোর, রূপনগরে একটি ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাট, মিরপুর-১০-এ একটি দোকান, চেতনা মডেল একাডেমি এবং চেতনা ডায়াগনস্টিক রয়েছে।