বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে সঠিক প্রস্তুতি নেয়া অত্যন্ত জরুরি, এবং এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। নিচে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো যা আপনাকে সময়মতো এবং সঠিকভাবে প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে।
১. সার্টিফিকেটের নামের মিল (𝑵𝒂𝒎𝒆 𝑪𝒐𝒏𝒔𝒊𝒔𝒕𝒆𝒏𝒄𝒚 𝒊𝒏 𝑫𝒐𝒄𝒖𝒎𝒆𝒏𝒕𝒔)
• আপনার নিজের নাম এবং পিতামাতার নামের বানানে যদি কোনো ভুল থাকে, তা সংশোধন করুন। সার্টিফিকেট, জন্মসনদ এবং পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রে (NID) নামের মিল থাকতে হবে।
• এটি শুধুমাত্র বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্যই নয়, আপনার ভবিষ্যতের অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত জরুরি। যেমন, ভিসা আবেদন বা পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় ভুল নামের কারণে সমস্যা হতে পারে।
২. পাসপোর্ট তৈরি (𝑷𝒂𝒔𝒔𝒑𝒐𝒓𝒕 𝑨𝒑𝒑𝒍𝒊𝒄𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏)
• পাসপোর্ট তৈরির সময় সার্টিফিকেট ও জন্মসনদ অনুযায়ী নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে দিন।
• আপনার জন্মসনদে যদি বর্তমান ঠিকানা বরিশাল থাকে, তবে পাসপোর্টেও একই ঠিকানা থাকতে হবে। কোনরকম ভুল থাকলে সেটি সংশোধন করা জরুরি। পাসপোর্ট সংশোধন করতে সময় লাগতে পারে, তাই আগেভাগে শুরু করা ভালো।
৩. 𝑺𝑺𝑪, 𝑯𝑺𝑪 এবং অন্যান্য একাডেমিক ডকুমেন্ট সংগ্রহ (𝑪𝒐𝒍𝒍𝒆𝒄𝒕 𝑨𝒄𝒂𝒅𝒆𝒎𝒊𝒄 𝑫𝒐𝒄𝒖𝒎𝒆𝒏𝒕𝒔)
• আপনার SSC এবং HSC পরীক্ষার নম্বরপত্র এবং সার্টিফিকেট বোর্ড থেকে সংগ্রহ করুন।
• যদি আপনি মাস্টার্সে যেতে চান, তবে অনার্সের সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
৪. সার্টিফিকেট সত্যায়িত করা (𝑫𝒐𝒄𝒖𝒎𝒆𝒏𝒕 𝑨𝒕𝒕𝒆𝒔𝒕𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏)
• আপনার সমস্ত সার্টিফিকেট শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত (attested) করানো জরুরি। এটি বিদেশে ভিসা প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন হতে পারে। সত্যায়িত করার জন্য সময় লাগতে পারে, তাই আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ভালো।
৫. 𝑰𝑬𝑳𝑻𝑺 প্রস্তুতি (𝑰𝑬𝑳𝑻𝑺 𝑷𝒓𝒆𝒑𝒂𝒓𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏)
• IELTS বা TOEFL পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করুন। যদি আপনি ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে চান, তবে এই পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• IELTS পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত স্কোর তুলতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে, এবং দেরি করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন বা সেশন মিস হতে পারে। এজন্য আগেভাগে প্রিপারেশন শুরু করুন।
৬. স্কলারশিপ এবং অন্যান্য পরীক্ষার প্রস্তুতি (𝑺𝒄𝒉𝒐𝒍𝒂𝒓𝒔𝒉𝒊𝒑 & 𝑬𝒙𝒂𝒎 𝑷𝒓𝒆𝒑𝒂𝒓𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏)
• স্কলারশিপে পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েটের জন্য SAT/ACT এবং স্নাতকোত্তরের জন্য GRE/GMAT পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করুন।
• এই পরীক্ষাগুলোর জন্য প্রিপারেশন নিয়ে আগেই ভালোভাবে জেনে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত, কারণ এসব পরীক্ষার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি প্রয়োজন।
৭. রেকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ (𝑪𝒐𝒍𝒍𝒆𝒄𝒕 𝑹𝒆𝒄𝒐𝒎𝒎𝒆𝒏𝒅𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏 𝑳𝒆𝒕𝒕𝒆𝒓𝒔)
• আপনাকে ভালোভাবে জানেন এমন দুইজন শিক্ষক বা প্রফেসরের কাছ থেকে রেকমেন্ডেশন লেটার সংগ্রহ করে রাখুন। অনেক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে রেকমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন হয়।
৮. 𝑺𝑶𝑷 লেখার প্রস্তুতি (𝑺𝑶𝑷 𝑷𝒓𝒆𝒑𝒂𝒓𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏)
• বিদেশে স্টুডেন্ট ভিসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন প্রক্রিয়ায় SOP (Statement of Purpose) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে লেখা।
• SOP লেখার জন্য সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিন। অভিজ্ঞ ভাই বা ফেসবুক গ্রুপের সাহায্য নিয়ে নিজস্ব ভাষায় SOP লিখুন, যাতে এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে সঠিকভাবে তুলে ধরে।
৯. বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন (𝑼𝒏𝒊𝒗𝒆𝒓𝒔𝒊𝒕𝒚 𝑺𝒆𝒍𝒆𝒄𝒕𝒊𝒐𝒏)
• আপনার পছন্দের দেশ এবং বিষয় বিবেচনা করে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিন। যে কোর্সে পড়তে চান, সেটি আপনার পূর্ববর্তী একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মিল থাকা উচিত। যেমন, সায়েন্স থেকে এইচএসসি করলে সায়েন্সের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নির্বাচন করা উচিত।
১০. বাজেট এবং বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন (𝑩𝒖𝒅𝒈𝒆𝒕 & 𝑼𝒏𝒊𝒗𝒆𝒓𝒔𝒊𝒕𝒚 𝑪𝒉𝒐𝒊𝒄𝒆)
• আপনার বাজেট এবং পছন্দের শহর অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করুন। বিভিন্ন দেশে থাকা খরচ এবং টিউশন ফি একেক রকম হতে পারে, তাই সেগুলো মাথায় রেখে বেছে নিন।
১১. বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ডেডলাইন মেনে চলা (𝑼𝒏𝒊𝒗𝒆𝒓𝒔𝒊𝒕𝒚 𝑨𝒑𝒑𝒍𝒊𝒄𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏 𝑫𝒆𝒂𝒅𝒍𝒊𝒏𝒆𝒔)
• পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন ডেডলাইনের দিকে খেয়াল রাখুন এবং সময়মতো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। অনেক সময় ভিসা বা আবেদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে, তাই আগেভাগেই শুরু করা ভালো।
১২. ভলেন্টিয়ার সংগঠনে যুক্ত হওয়া (𝑱𝒐𝒊𝒏 𝑽𝒐𝒍𝒖𝒏𝒕𝒆𝒆𝒓𝒊𝒏𝒈 𝑶𝒓𝒈𝒂𝒏𝒊𝒛𝒂𝒕𝒊𝒐𝒏𝒔)
• ভলেন্টিয়ার কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে এটি আপনার আবেদন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে স্কলারশিপ পেতে বা ভিসা ইন্টারভিউতে আপনার ভলেন্টিয়ার কাজের অভিজ্ঞতা বাড়তি পয়েন্ট যোগ করতে পারে।
১৩. রান্না শেখা (𝑳𝒆𝒂𝒓𝒏 𝑪𝒐𝒐𝒌𝒊𝒏𝒈)
• বিদেশে গেলে বেশিরভাগ সময় আপনাকে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে হবে। তাই রান্না শিখে যাওয়া খুবই জরুরি। আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাবারগুলো কীভাবে তৈরি করতে হয়, তা আগে থেকেই শিখে নিন।
১৪. ড্রাইভিং শেখা (𝑳𝒆𝒂𝒓𝒏 𝑫𝒓𝒊𝒗𝒊𝒏𝒈)
• যদি সম্ভব হয়, ড্রাইভিং শিখে নিন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে রাখুন। আপনি চাইলে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্সও তৈরি করে নিতে পারেন, যা বিদেশে গাড়ি চালাতে কাজে লাগবে।
১৫. কম্পিউটার স্কিল উন্নয়ন (𝑼𝒑𝒈𝒓𝒂𝒅𝒆 𝑪𝒐𝒎𝒑𝒖𝒕𝒆𝒓 𝑺𝒌𝒊𝒍𝒍𝒔)
• বিদেশে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন সময়ে কম্পিউটার স্কিল যেমন মাইক্রোসফট অফিস, ওয়ার্ড, এক্সেল এবং পাওয়ারপয়েন্ট প্রয়োজন হতে পারে। এগুলো আগে থেকেই শিখে রাখুন এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন।
এই ১৫টি ধাপ আপনাকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগেই সঠিক প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে এবং ভিসা প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে মানিয়ে নিতে সহায়ক হবে।