বিদেশে মেডিকেলে পড়াশোনা করার স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর। কিন্তু খরচের কথা শুনে পড়ে মাথায় হাত। এখানেই স্কলারশিপ হতে পারে আপনার ভরসা। বিশেষ করে যারা ডাক্তার হতে চায় এবং মেডিকেল ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাদের জন্য সঠিক স্কলারশিপ নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা কিভাবে করবেন?
জানতে হলে পড়তে হবে আমাদের এই মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য কোন স্কলারশিপ ভালো রিলেটেড স্কলারশিপটি।
প্রথমত আপনাকে বুঝতে হবে কেন মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য স্কলারশিপ গুরুত্বপূর্ণ!
আমরা সকলেই জানি মেডিকেল পড়াশোনার খরচ অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর প্রায় ৮-১২ লাখ টাকা খরচ হয়। আর বিদেশে, যেমন কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রে এই খরচ বছরে ৩০-৫০ লাখ টাকারও বেশি।
এত বড় অঙ্কের টাকা সব পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই স্কলারশিপ ছাড়া বিদেশে মেডিকেল পড়াশোনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এবার আসি বিদেশে মেডিকেল স্কলারশিপের ধরণের ব্যাপারে। বিদেশে মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য মূলত ৩ ধরনের স্কলারশিপ রয়েছে:
১. Full Funded Scholarship: যেখানে আপনার সমস্ত খরচ স্কলারশিপ থেকে কাভার হবে, যেমন
টিউশন ফি, অ্যাকমোডেশন, ট্রাভেল খরচ, বইপত্র এবং ল্যাব খরচ হেল্থ ইনসুরেন্স। আর Full Funded Scholarship এর মাঝে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো Fulbright Scholarship (USA) এবং Chevening Scholarship (UK)।
২. Partial Scholarship: এই স্কলারশিপ মূলত আংশিক স্কলারশিপ। যেখানে আপনার মোট খরচের একটা অংশ কভার করা হবে। যেমন শুধু টিউশন ফি কাভার হতে পারে বা শুধু অ্যাকমোডেশন খরচ কভার হতে পারে। মূলত জার্মানির DAAD Partial Scholarships Partial Scholarship হিসাবে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়।
৩. Research Based Scholarship: সবশেষে রয়েছে রিসার্চ বেইজড স্কলারশিপ। যারা পিএইচডি বা মাস্টার্সে গবেষণা করতে চায়, তারা এই ধরনের স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবে। আর এই ধরণের স্কলারশিপের মধ্যে রয়েছে Erasmus Mundus Joint Masters এবং Commonwealth Scholarships।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সেরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাই এখানে স্কলারশিপ পেলে আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার পার্মানেন্ট হয়ে যাবে৷ এসব স্কলারশিপে আপনি প্রতি বছর পাবেন ৩৫-৫০ লাখ টাকা। সেই সাথে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপে সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে এক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতা হিসাবে থাকতে হবে IELTS বা TOEFL স্কোর, ভালো GPA এবং রিসার্চের অভিজ্ঞতা। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় কিছু স্কলারশিপ হলো:
কানাডা: এরপর আসি কানাডার ব্যাপারে। আপনার যদি প্রতি বছর ৩০-৪০ লাখ টাকা পড়াশোনার পেছনে খরচ করার মতো পরিস্থিতি থাকে তবে কানাডা বেছে নিতে পারেন। তবে যাদের অত টাকা নেই তারা ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপে কানাডায় ফ্রি পড়াশোনা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসাবে আপনার থাকতে হবে IELTS ৭.০+ স্কোর, ভালো একাডেমিক রেজাল্ট এবং গোছানো Recommendation Letter। আসুন কানাডার কিছু জনপ্রিয় স্কলারশিপ সম্পর্কে জানি:
যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যে মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য বেশ কিছু বড় স্কলারশিপ রয়েছে। তবে আপনি যদি স্কলারশিপ না পান সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি বছর ২৫-৩৫ লাখ টাকা গুনতে হবে। তাছাড়া দেশটিতে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে আপনার ঝুলিতে থাকতে হবে IELTS ৬.৫+, মেডিকেল বিষয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কোনো কোনো সময় কাজের অভিজ্ঞতা। দেশটির জনপ্রিয় স্কলারশিপ হলো:
অস্ট্রেলিয়া: মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য কোন স্কলারশিপ ভালো প্রশ্নের উত্তরে আমরা অস্ট্রেলিয়ার কথাও বলতে পারি। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ অনেক ভালো। নরমালি এখানে পড়তে লাগবে প্রতি বছর ২০-৩০ লাখ টাকা। আর যদি ফুল ফ্রি স্কলারশিপ পেয়ে যান তাহলে তো কোনো কথাই নেই। এক্ষেত্রে স্কলারশিপের অপশন হিসাবে আপনি পেয়ে যাবেন:
জার্মানি: জার্মানিতে মেডিকেল সেক্টরে পড়াশোনার খরচ একেবারে নেই বললেই চলে। তাছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নেই। তবে আপনি যদি ফুল ফ্রি স্কলারশিপ না পান সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি বছর ৭-১০ লাখ টাকা গুনতে হবে। যাইহোক, দেশটির জনপ্রিয় কিছু স্কলারশিপ হলো:
মেডিকেল স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লাগে। যেমন:
মনে রাখবেন মেডিকেল স্কলারশিপ পেতে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। অন্তত ১ বছর আগে থেকে স্কলারশিপের তথ্য সংগ্রহ শুরু করুন। পাশাপাশি IELTS বা TOEFL এর ভালো স্কোর করার ট্রাই করুন। তাছাড়া মনে রাখবেন মেডিকেল ফিল্ডে রিসার্চ অভিজ্ঞতা অনেক বড় প্লাস পয়েন্ট।
মূল কথা হলো সঠিক তথ্য, ধৈর্য এবং পরিকল্পনা থাকলেই আপনার মেডিকেল স্কলারশিপের স্বপ্ন পূরণ হতে বাধ্য। মেডিকেল স্কলারশিপ নিয়ে আরও তথ্য পেতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে ভুলবেন না।