বাংলাদেশ সময় ভোর চারটায় শুরু হওয়া এই ম্যাচটিতে সৌম্য একে একে ৫০, ১০০ ও ১৫০ রান স্পর্শ করে এগোতে থাকেন।
পৃথিবীর এই প্রান্তে ঘুমকাতুরে চোখে অনেকেই চোখ কচলে স্কোরকার্ড দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
অনেকেই সকালে উঠে ফেসবুকে নিজেদের অনুভূতি শেয়ার করেন এভাবে, ‘সৌম্য! এমন ইনিংস! অবিশ্বাস্য’!
যে সৌম্য সরকার বাংলাদেশ দলের হয়ে গত চার বছরে এই সিরিজের আগে মাত্র পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন সেই সৌম্যকে ব্যাট হাতে অনেকের কাছেই অচেনা লাগছিল।
আজকের সৌম্যকেও অনেকের কাছে অচেনা লেগেছে, অনেকের মতে অনিয়মিত সৌম্য নেলসনেও দেখালেন সেটারই আরেক নিদর্শন।
নিউজিল্যান্ডের মাঠে ১৫১ বলে ১৬৯ রানের এক বিরল ইনিংস খেলেছেন সৌম্য সরকার।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোন এশিয়ান ব্যাটারের এর আগে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল সাচিনের, ১৬৩ রান। সৌম্য সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিলেন।
২০০৯ সালে ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তী সাচিন টেন্ডুলকার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ১৬৩ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। সেই ম্যাচে ভারত ৫৮ রানে বিজয়ী হয়েছিল।
তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মার্টিন গাপটিলের অপরাজিত ২৩৭।
৫৮ বলে সৌম্য সরকার যখন ৫০ রান পূর্ণ করেন, ততক্ষণে সৌম্য সরকারের বিপরীত প্রান্তে চারজন ব্যাটার আউট হয়ে ফিরে গেছেন।
এনামুল বিজয় করেছেন ২, লিটন দাস ৬, নাজমুল শান্ত ৬ রান ও তাওহীদ হৃদয় ১২।
এরই মধ্যে সৌম্য নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে খানিকটা ধীরতা নিয়ে আসেন।
নিজের পছন্দের স্কোরিং জোন মিড উইকেটে চার মেরে শুরু করেন সৌম্য সরকার। এরপর কভার, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট, ফাইন লেগ, স্কয়ার লেগ উইকেটের চারিপাশে শট খেলার পারদর্শিতা দেখান সৌম্য সরকার।
এর আগে ৫০ রান স্পর্শ করতে সৌম্য ৯টি চার মারেন। তবে ৫০ থেকে ১০০তে পৌঁছাতে সৌম্য সরকার মারেন চারটি চার।
এর মাঝে ৯২ রানে থাকা অবস্থায় একবার ক্যাচও তুলে দেন সৌম্য, নিউজিল্যান্ডের উইল ইয়াং ক্যাচটা ধরতে পারেননি।
৫৮ বলে ৫০ ও ১১৬ বলে ১০০ করা সৌম্য ঝড় তোলেন ১০০ পার করার পরে, শতক পূর্ণ করার পরের ৩৫ বলে ৬৯ রান তোলেন সৌম্য সরকার।
এই শেষ অংশে দুটি ছক্কাও হাকান তিনি, দুটি ছক্কাই তার প্রিয় স্কয়ার লেগ ও মিডউইকেটের ওপর দিয়ে।
সৌম্য তার ক্যারিয়ারের সেরা ওয়ানডে ইনিংসটাই খেললেন নেলসনে।
ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরে গেলেও ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন সৌম্য সরকার।
সৌম্য যথাযথ সঙ্গ পেলে আরও স্বতস্ফুর্ত ব্যাট চালাতে পারতেন বলেই মনে করছেন তিনি।
ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, “ম্যাচটা জিতলে আমার ইনিংসটা আরও স্পেশাল হতে পারতো। আমরা পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়েছি। দুটি জুটিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভেঙ্গে গেছে”।
ম্যাচের শেষে নিজের প্রিয় শটের কথাও মনে করিয়ে দিলেন, মিড উইকেট দিয়ে পুল শটে ছক্কা।
সৌম্য সরকারের ১৬৯ বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে ব্যক্তিগত ইনিংস,এক নম্বরে আছে লিটন দাসের ১৭৬ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের করা ২৯১ রানের মধ্যে ১৬৯ রানই সৌম্য সরকারের, যা মোট রানের ৫৮ শতাংশ এটাও বাংলাদেশের জন্য রেকর্ড।