আপনাদের মাঝে কি কখনো কবরের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ কাজ করে? জানতে ইচ্ছে করে কিভাবে শুরু হয়েছিলো এই মানব-কবরের যাত্রা?
পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ) আর প্রথম মানবী হযরত হওয়া (আ)…এই তথ্যটুকু ভালোভাবে জানলেও আমরা অনেকেই পৃথিবীর প্রথম কবর সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে জানি না। চলুন তবে আজ এ-ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত তথ্য এবং দেখা যাক কিভাবে এই কবর দেওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিলো!
মূলত হযরত আদম এবং হাওয়া (আঃ)-এর ২ জন সন্তান ছিলেন এবং তারা উভয়ই পুত্রসন্তান হিসেবে দুনিয়াতে এসেছিলেন। এদের মাঝে এক পুত্রের নাম ছিল হাবিল এবং অন্য এক পুত্রের নাম ছিল কাবিল।
নিয়তির পরিহাসে এবং আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় কাবিল তার সহোদর ভাই হাবিলকে একটা সময় অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিলেন। পৃথিবীতে আদম সন্তানের মধ্যে প্রথম হত্যাকান্ড হিসেবে এই হত্যাকান্ড ইতিহাসের পাতায় কালো পাথরে লেখা থাকবে চিরকাল।
যাইহোক! এবার আসি এই হত্যাকান্ডের পেছনের কারণটুকুর ব্যাপারে। মূলত হযরত আদম (আ) ও হাওয়া (আ) পৃথিবীতে আগমনের পর পৃথিবীর সন্তান প্রজননের ব্যাপারটি প্রথমবারের সংঘটিত হয়। হাবিল-কাবিল ছাড়াও এই দম্পতির আরো একটি কন্যা সন্তান ছিলো।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো সে-সময় শুরুতে আদাম-হাওয়া পরিবার ছাড়া অন্য কোনো পরিবার ছিলো না। যার কারণে বিয়ে, সংসার এবং বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আলাদা একটি নিয়মের ব্যবস্থা করা হলো। এই নিয়ম অনুযায়ী জোড়ায় জোড়ায় সন্তান হলে একই পরিবারের আগের ছেলের সাথে পরের বারের মেয়ে আর পরের বারের মেয়ের সাথে আগের বারের ছেলের বিয়ে হতো!
এমন নিয়মকে মানতে গিয়ে কাবিলের সাথে যে বোনটি জন্মগ্রহণ করলো সেটি হাবিলের সাথে আর হাবিলের সাথে যে বোনটি জন্মগ্রহণ করলো তার বিবাহ কাবিলের সাথে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো। তবে এমন পরিস্থিতিতে বাঁধ সাঁধলো কাবিল। কাবিলের সাথে নির্দিষ্ট মেয়েটির বিবাহ হওয়ার বিধান থাকলেও কাবিল তাতে রাজি হলো না।
এক্ষেত্রে পিতা হযরত আদম (আ) তার শরিয়তের বিধান ঠিক রাখার জন্য সন্তানের এই অন্যায় আবদারকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেন। সবকিছুর পরও যখন সমাধান পাওয়া যাচ্ছিলো না তখন পিতা হযরত আদম (আ) হাবিল ও কাবিলকে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে কুরবানী দিতে আদেশ দিলেন। যার কুরবানী আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন সেই হবে সুন্দরী সেই বোনের বিবাহযোগ্য ব্যাক্তি।
এদিকে কাবিল ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু পালন করলেও হাবিল কৃষি কাজ করতেন বলে তিনি কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্য পেশ করতে সক্ষম হলেন এবং হাবিলের সেই কুরবানীটিই আল্লাহ পাকের পছন্দ হলো! এতে কাবিলের দুঃখ-ক্ষোভ আর বহুগুণে বেড়ে গেলে সে নিজ হাতেই কাবিলকে হত্যা করে ফেলে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মৃত্যু হিসেবে আজো স্বরণীয় হয়ে আছে।
সে যাইহোক! এদিকে হাবিলকে মেরে ফেলে কাবিল কিন্তু প্রচুর ভয় পাওয়া শুরু করলো। প্রথম খুন এবং প্রথম লাশ হিসেবে হাবিলের নিথর দেহকে কি করবে সে নিয়ে চিন্তায় মাথা কাজ করছিলো না তার।
কিছু সময় পর আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি কাক পাঠানো হলো। কাকটি ঠোঁট দিয়ে ঠুকরে মাটি খুঁড়তে লাগলে কাবিল যেন অকূলে কুল পেলো এবং বুঝতে পারলো তাকে কি করতে হবে! সবকিছু আঁচ করতে পেরে কাবিল একখানা অস্ত্র সংগ্রহ করে এনে মাটি খুঁড়ে হাবিলকে কবর দিলো এবং এটিই ছিলো ইতিহাসের প্রথম কবর।
যদিও মুজাহিদ (র.) বলেন, হাবিলকে হত্যার কারণে আল্লাহ পাক তাকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেন। এক্ষেত্রে আল্লাহ পাক কাবিলের নলাকে ঊরুর সাথে সংলগ্ন করে দেন। তার মুখমণ্ডলকে সূর্যের দিকে করে দেয়া হয়।
কেমন লাগলো আমাদের আজকের এই আয়োজন? ইতিহাসের প্রথম কবরের ঘটনাটি শুনেই বা কেমন লাগলো? কমেন্টবক্সে তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!