মহান আল্লাহতায়ালা কর্তৃক মানুষের প্রতি এক বিরাট এহসান হলো মানুষ তার রবের সন্তুষ্টিতে দান-সদকা করা। এটা মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ এহসান।
কেননা এর মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য রেখেছেন অনেক কল্যাণ। দান-সদকার ফলে আল্লাহতায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করে থাকেন, আয়ের মধ্যে বরকত দেন, পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করেন ও বিভিন্ন বিপদ থেকে হেফাজত করেন। তাছাড়া দান ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়ে থাকে, শান্তিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায় এবং সুন্দর ও সৌহার্দ্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় এর ভূমিকা অত্যধিক
আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও নারীরা এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সূরা-হাদিদ : ১৮)। উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা দানশীল নারী-পুরুষের জন্য কল্যাণের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ প্রদত্ত এ অনুগ্রহের মধ্যে প্রথম যে দানের কথা আসে তা হলো জাকাত।
জাকাত হচ্ছে দান-সদকার মধ্যে একটি ফরজ পর্যায়ের ইবাদাত যা কেবল সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ করা হয়েছে। আর এ দানের ফলে বান্দার ধনসম্পদ পবিত্র হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও জাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সূরা-বাকারা : ৪৩)।
দানের কারণে কখনো সম্পদ কমে না; বরং বৃদ্ধি পেতে থাকে। বাহ্যিকতায় সুদের বৃদ্ধি দেখলেও প্রকৃত অর্থে সুদে রয়েছে মহাক্ষতি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সূরা-বাকারা : ২৭৬)।
দান-সদকা এমন একটি বিষয় যা আল্লাহর সন্তুষ্টিতে যদি কোনো ক্ষুদ্র কাজও করা হয়, তাও কিন্তু সদকা হিসাবে গণ্য হবে। এমনকি নিজের প্রতিপাল্য ও অধীনস্থ পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণে যে অর্থ আমরা ব্যয় করি, তাও কিন্তু সদকা হিসাবে বিবেচিত। এ ক্ষেত্রে যে সাওয়াব মিলে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) ওই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এভাবে : তুমি যা কিছুই ব্যয় করো, সেটাই তোমার জন্য সদকা। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে নলাটি তুমি তুলে দাও সেটাও। (সহিহ বুখারি : ৫৩৫৪)।
দানের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল উপায়ে অর্জিত মাল সদকা করে, (আল্লাহতায়ালা হালাল, অর্থাৎ পবিত্রকেই কবুল করেন), তাহলে ওই সদকা সে আল্লাহর হাতে দিল। আল্লাহতায়ালা তাকে এভাবে লালনপালন করেন, যেভাবে তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা কিংবা উটের বাচ্চা লালন-পালন কর। শেষ পর্যন্ত সে সদকা (বৃদ্ধি পেয়ে) পর্বতের সমান হয়ে যায়। (মুয়াত্তা মালিক)।