ধরুন, আপনি ঢাকায় বসবাস করেন। কিন্তু মনে ইচ্ছা জাগলো পাহাড়, নদী কিংবা হাওর দেখার। কিন্তু বাজেট টানাটানি। আপনার জন্য রয়েছে সুন্দর একটি সমাধান। কারণ বাংলাদেশে ট্রেনই হল সবচেয়ে সস্তা এবং আরামদায়ক ভ্রমণের মাধ্যম।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায়, সময়, খরচ, কোন রুটে যাবেন, কীভাবে টিকিট কিনবেনসহ যাবতীয় সব তথ্য। আর কিছু মজার টিপস তো থাকছেই। সো স্টে উইথ আস।
বর্তমানে বাংলাদেশ ভ্রমণপিপাসুদের এক পছন্দের গন্তব্য। আর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেকোনো পর্যটককেই দিতে পারে প্রশান্তি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। আর আজকে আমরা আপনাকে জানাবো বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায় এবং খরচ সম্পর্কে।
ট্রেন ভ্রমণই একমাত্র ভ্রমণ, যেখানে স্থলপথে যানজটের শিকার তো হতেই হয় না, বরং পাওয়া যায় এক প্রশান্তিময় ভ্রমণ। এক্ষেত্রে ঢাকা টু চট্টগ্রাম আসতে ট্রেনের চেয়ার কোচে খরচ ৩৬৫ টাকা। সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস হতে পারে আপনার জন্য সেরা অপশন।
ঢাকা টু সিলেট রুটেও রয়েছে জনপ্রিয় কিছু ট্রেন সার্ভিস। আন্তঃনগর ট্রেনে ৩৪০ টাকা প্রতি চেয়ার কোচে। সময় লাগবে ৭ ঘণ্টা। পারাবত, উপবন অথবা কালনী ট্রেনে হবে আপনার আরামদায়ক ভ্রমণ।
রাজশাহী বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্পট। ট্রেনের প্রতি চেয়ারে ৩৬০ টাকা, সময় ৫.৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। পাহাড়িকা ও বনলতা সুপারফাস্ট হলো সেরা অপশন।
সুন্দরবনের অধিকারী খুলনায় যেতে ঢাকা থেকে ট্রেনের প্রতি চেয়ারের খরচ ৩৯৫ টাকা এবং সময় লাগবে ৮ ঘণ্টার মতো। সুন্দরবন ও চিত্রা আন্তঃনগর ট্রেন ভালো অপশন।
ঢাকা থেকে সবচয়ে কাছের বিভাগ ময়মনসিংহে ট্রেনে যেতে প্রতি চেয়ারে খরচ পড়বে মাত্র ১২০-১৫০ টাকা। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টার মতো। মোহনগঞ্জ, জামালপুর এক্সপ্রেস হতে পারে আপনার জন্য সেরা অপশন।
নেত্রকোণাও বাংলাদেশের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম। ট্রেনে করে ঢাকা থেকে যেতে মোহনগঞ্জ অথবা হাওর এক্সপ্রেস ব্যবহার করতে পারেন। ভাড়া পড়বে ১৫০-২০০ টাকা এবং সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। বর্ষায় টাঙুয়া হাওরের জন্য অসাধারণ রুট।
বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায় হলো সিজনাল টাইমে ট্যুরে যাওয়া। আর বাংলাদেশের ওয়েদার কন্ডিশন এবং লোকালিটির বিচারে ট্রেনে সস্তায় ভ্রমণ করার জন্য বিশেষ কিছু টাইম রয়েছে।
বাংলাদেশে ট্রেন ভ্রমণ করতে আপনার জন্য বেস্ট টাইম হবে শীতকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস হলো সবচেয়ে আরামদায়ক এবং পারফেক্ট টাইম। ট্রেন ভ্রমণে ঠাণ্ডা হাওয়া ও কুয়াশার মাঝে জানালা দিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করার সুযোগ কিন্তু হাতছাড়া করবেন না।
শীতকাল ছাড়াও বর্ষাকালের ট্রেন ভ্রমণও আপনাকে প্রচুর আনন্দ দেবে। জুন থেকে আগস্ট মাস হলো পারফেক্ট টাইম। হাওর অঞ্চল বা পাহাড়ি ঝর্ণা দেখার জন্য বেস্ট সময় এই বর্ষাকাল। তবে দেরি বা সিট ক্যানসেলেশনের জন্য প্রস্তুত থাকাও ভালো। আর সবসময় বিশেষত সিজনাল টাইমগুলোতে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই টিকেট কনফার্ম করে রাখবেন।
ট্রেনে ভ্রমণ আপনার ট্যুর খরচ অনেকটাই সাশ্রয় করবে। বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায় এবং এর কার্যকরিতা সস্পূর্ণ নির্ভর করে টিকিট প্রাইসের ওপর।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট eticket.railway.gov.bd থেকে টিকেট কিনলে আপনার সময় এবং টাকা দুটোই বাঁচবে।
আর এক্ষেত্রে আপনি Nagad বা bKash দিয়ে অনলাইন পেমেন্ট করে ফ্রি সিট বুক করতে পারবেন। মোবাইল অ্যাপে Rail Sheba App সিট চেক এবং ট্রেন ট্র্যাকও করা যায় যা আপনাকে দেবে স্মার্ট একটা এক্সপেরিয়েন্স। তাই সবসময় ট্রাই করবেন অনলাইনে সব কাজ কমপ্লিট করার।
আর যাত্রার কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন আগে টিকিট কাটার চেষ্টা করবেন। শেষ মুহূর্তে টিকিট না পেলে সরাসরি গিয়েও টিকিট কিনতে পারবেন।
বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায় হলো কিছু স্মার্ট টিপস এন্ড ট্রিকস এপ্লাই করা। এক্ষেত্রে চেয়ার কোচ বেছে নেয়ার সময় এসি নয়, সাধারণ চেয়ার কোচে বেছে নিন। কারণ এক্ষেত্রে তেমন একটা পার্থক্য দেখা যায় না।
তাছাড়া যেকোনো খাবার আগে থেকেই সাথে রাখবেন। কারণ প্ল্যাটফর্মে খাবারের দাম আকাশচুম্বি। তাই বাড়ি থেকে হালকা স্ন্যাকস বা টিফিন বক্স নেওয়াই ভালো। এর পাশাপাশি চেষ্টা করবেন দুপুর বা সকালের ট্রেন নিতে। কারণ রাতের ট্রেনে তুলনামূলক বাড়তি ভাড়া হয়।
চেষ্টা করবেন গ্রুপে ভ্রমণ করতে। তাছাড়া লোকাল গন্তব্যে রিকশা বা অটো শেয়ার করলে ট্রিপ আরও সাশ্রয়ী হবে। কিছু স্মার্ট ট্রিকস সবসময় মনে চলবেন যাতে বাংলাদেশে আপনার ট্রেনভ্রমণ হয় সাশ্রয়ী এবং আনন্দদায়ক।
বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায়ের এই পর্যায়ে আমরা আপনাকে এক দিনের একটা মিনিপ্ল্যান এবং বাজেট শেয়ার করছি যাতে আপনারা নিজের ট্রিপের সাথে রিলেট করতে পারেন।
ধরুন আপনার গন্তব্য ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এক্ষেত্রে ভাড়া ১২০ টাকা চেয়ারপ্রতি। সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো। দর্শনীয় স্থান হিসবে থাকবে ঘোড়াশাল এবং আশুগঞ্জ নদী ঘাট।
খাবারের ক্ষেত্রে লোকাল খাবার ২০০ টাকার মধ্যেই পাবেন। আর ফিরতি ট্রেনের ভাড়াও পড়বে ১২০ টাকা৷ তার মানে মোটামুটি ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যেই আপনি ঘুরে আসতে পারবেন।
ট্রেন ভ্রমন আপনাকে দিতে পারে মজার এবং রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। আর বাংলাদেশে ট্রেন ভ্রমণ করা মানে অন্যরকম লমএক অনুভূতি। আর তাই দেখা যায় যে বিভিন্ন ফরেইন ব্লগাররা বাংলাদেশে আসলে মাস্টবি ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে।
কিন্তু ট্রেনে মজার একটা অভিজ্ঞতা পেতে হলে ট্রেনের জানালার পাশে সিট বেছে নিতে হবে আপনাকে। আর যাবার সময় অবশ্যই গিটার সাথে রাখবেন। গান, চা আড্ডা আর সুন্দর এই প্রকৃতির স্বমন্বয়ে কিছু সুন্দর স্মৃতি তৈরি করতে ভুলবেন না কিন্তু।
আশা করি আপনি বাংলাদেশে সস্তায় ট্রেন ভ্রমণ করার উপায় সম্পর্কে ডিটেইলি জানতে পেরেছেন। আর তাই সঠিক সময় বেছে নিন এবং ভাড়া বুঝে টিকিট কনফার্ম করুন। ট্রেনের জানালার পাশে বসে আপনি শুধু গন্তব্যে পৌঁছাবেন না, বরং জীবনের গল্পেও এক নতুন পাতা যোগ করবেন। তাই আর দেরি না করে আজই সঠিক সময় বেছে নিন এবং ভাড়া বুঝে টিকিট কনফার্ম করুন। গন্তব্যে পৌছে প্রকৃতির কাছে নিজেকে উজার করে কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটান। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।