উইকিপিডিয়া মতে ২০১০ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণকারীর সংখ্যা ৫৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। হিসাব করলে দাঁড়ায় এটি বিশ্বের ৭/৮% জনগনের ধর্মীয় অনুভুতির ভিত্তি।
মূলত পৃথিবীতে যে ক’টি দেশে বৌদ্ধ ধর্মকে সরকারি ধর্মে ঘোষণা করা হয়েছে সে ক’টি দেশ হলো ভুটান, কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা।
এছাড়াও ভুটান, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া এবং লাওসের মতো দেশগুলিতে বৌদ্ধ ধর্মকে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে চলুন আজ সে-সম্পর্কেই জানা যাক। জানা যাক পৃথিবীর জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশ সম্পর্কে।
২৫৪.৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে চীন। বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ চীন। মূলত বৌদ্ধধর্ম চীনে সরকারী ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছে বহুবছর ধরে। যার কারণে বর্তমানে দেশটির ৯৮ শতাংশ ব্যাক্তি ধর্মীয় দিক দিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করছে।
কখনো যদি আপনি চীনে ভ্রমণ করতে বা কাজের সুবাদে যান তবে সেক্ষেত্রে সেখানে বৌদ্ধধর্মের তিনটি সম্প্রদায় পাবেন। এগুলি হলো:
প্রাচীন কাল থেকেই দেশটিতে ফাইলিয়াল ধার্মিকতা, পূর্বপুরুষের উপাসনা এবং ধ্যানের মাধ্যমে নানান উপায়ে বৌদ্ধের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
বলে রাখা ভালো দেশটিতে সাধারণ বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা হান নামের আরো একটি বৌদ্ধ গঠন করে।
জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশ হিসাবে থাইল্যান্ডের ব্যাপারে বলা যায়। কারণ থাইল্যান্ড হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ।
এই দেশটিতে বৌদ্ধ জনসংখ্যার মোট পরিমাণ ৯৩.৪ শতাংশ পর্যন্ত। এই দেশটির বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ও শিষ্যদের আকর্ষণ করে আসছে।
যদি এই দেশের ধর্মীয় প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চান সেক্ষেত্রে বলবো থাইল্যান্ড প্রধানত থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুসরণ করে থাকে।
আর জন্মগতভাবে থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার অধিকাংশই বৌদ্ধ বংশোদ্ভূত। যার কারণে থাইল্যান্ডের অলিগলিতে মঠ, মন্দির এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন উৎসব হরহামেশাই লক্ষ্য করা যায়।
জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশ হিসাবে মিয়ানমার অন্যতম। দেশটির বর্তমানে বৌদ্ধ জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮৭.৯ শতাংশ।
মায়ানমার বা বার্মায় এতো পরিমাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী থাকার কারণে দেশটিকে বৌদ্ধ জাতির দেশ বলা হয়ে থাকে। জানা যায় থাইল্যান্ডের মতো এই জাতিও থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুসরণ করে থাকে।
দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বৌদ্ধ ধর্ম জাতিগত প্রধান ধর্ম হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যার কারণে সারা দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মঠ এবং মন্দির রয়েছে। যার মধ্যে জনপ্রিয় একটি বৌদ্ধন্দির বা প্যাগোডা হলো শ্বেদাগন প্যাগোডা।
আর এসব প্যাগোডার কার্যক্রম এবং দেশটির জনসংখ্যার দৈনন্দিন কার্যক্রমই প্রমাণ করে এই জাতি আধ্যাত্মিকতা ও বৌদ্ধ ঐতিহ্যে বেশ সমৃদ্ধ একটি জাতি।
চতুর্থ সর্বাধিক বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ হলো জাপান। জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশের মাঝে থাকা এই দেশটির জনসংখ্যার ৪৬.৩ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে থাকে। এই জাতি বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে শিন্টো ধর্ম অনুসরণ করে।
আর এই ধর্ম অনুসরণে জাপানিজদের সাহায্য করে সমাজে নির্মিত বিভিন্ন মন্দির, ধ্যান অনুশীলনের বিভিন্ন কাজকর্ম এবং ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য অনুষ্ঠান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাপানে পূর্ব এশীয় বৌদ্ধধর্মের ঐতিহাসিক প্রভাব রয়েছে। খাঁটি বাংলায় এই ঐতিহ্যকে বলা হয় জেন এবং বিশুদ্ধ ভূমি ঐতিহ্য।
এদিকে বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল হলেও দিনকে দিন জাপানিজদের ধর্মীয় অনুভুতি অনেকটাই কমে আসছে।
আপনি কি জানেন, জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশের মাঝে পাঁচ নাম্বারে ঠিক কোন দেশটি আছে? এক্ষেত্রে বলবো কম্বোডিয়া! কম্বোডিয়া হলো বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ।
কম্বোডিয়ায়, জনসংখ্যার ৯৩ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে। আর এর মধ্যে, ৯৫ শতাংশ ব্যাক্তি পালন করে বৌদ্ধ থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম। অন্যদিকে বাকি ৫ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পালন করে থাম্ম্যুত বৌদ্ধধর্ম।
দেশটির এই বিশাল সংখ্যক জনগণের বৌদ্ধ ধর্ম পালনের পেছনে মূল কারণ হলো কম্বোডিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতি গঠনে বৌদ্ধধর্মের গুরুত্ব ছিলো অভাবনীয়। বহুকাল ধরেই থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম এখানে প্রচলিত ধর্মের প্রধান রূপ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
যার প্রমাণ হিসাবে বলা যায় দেশটির রাজকীয় আঙ্কোর ওয়াট। মূলত পূর্বে এটি একটি হিন্দু মন্দির কমপ্লেক্স হিসাবে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে এটি বৌদ্ধ স্থান হয়ে ওঠে। যা সরাসরি কম্বোডিয়ার সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে।
জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশ হিসাবে ভিয়েতনামের কথা না বললেই নয়। ভিয়েতনাম হলো বিশ্বের ষষ্ঠ সর্বাধিক বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ। ভিয়েতনামে, বৌদ্ধ জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৪.৯ শতাংশ।
যদিও ভিয়েতনাম বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় ধর্মীয় অনুভূতির জন্যে বেশ বিখ্যাত! তবে এখানকার বেশিরভাগ মানুষের হৃদয় জুড়েই বৌদ্ধ ধর্ম একটি আলাদা স্থান দখল করে আছে। যার উদাহরণ হিসাবে মহাযান বৌদ্ধধর্ম স্কুলের কথা বলা যেতে পারে।
ভিয়েতনামের বৌদ্ধিক চিন্তাধারা প্রধান স্কুল হিসাবে এটি বহুবছর ধরে ধর্মীয় শিক্ষার আয়োজন করে আসছে৷
তাছাড়া দেশটিতে বৌদ্ধ ধর্মের উপর একাধিক মন্দির এবং প্যাগোডাও রয়েছে। এক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে দেশটির হিউ মনুমেন্টের কমপ্লেক্স এবং পারফিউম প্যাগোডা মন্দির।
জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশের কাতারে এবারে ৭ নাম্বারে ফেলবো শ্রীলঙ্কাকে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭০.২ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে৷ মূলত ভারতের দক্ষিণ উপকূলের কাছে অবস্থিত এই শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর পরিমাণ নেহায়েতই কম নয়।
এখানকার বৌদ্ধরা থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুসরণ করে থাকে। পাশাপাশি জীবনে চলার পথে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও জীবনধারার সাথে নিজেদের মাঝে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়াস চালায়।
এই দেশটিতে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির এবং ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুর শহর এসব স্থানের জন্যে বেশ বিখ্যাত হয়ে আছে। তাছাড়া অধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী থাকার কারণে শ্রীলঙ্কায় সারা বছর ধরে বিভিন্ন বৌদ্ধ উৎসব উদযাপন করার প্রচলন রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ। রিসার্চ অনুসারে দক্ষিণ কোরিয়ায় জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম পালন করে থাকে।
এই কোরিয়ায় প্রাচীনকাল থেকে অনুসরণ করা হয়ে আসছে এমন ধর্মের মাঝে বৌদ্ধ ধর্মই সবচেয়ে পুরোনো। যা এক বিশেষ ঐতিহাসিক তাৎপর্য বহন করছে। বর্তমানে যোগে অর্ডার নামক একটি ক্যাটাগরি দেশের বৃহত্তম বৌদ্ধ সম্প্রদায় হিসাবে নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে এবং নিয়মিত বৌদ্ধ শিক্ষার সংরক্ষণ ও প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
পাশাপাশি দেশটির বুলগুকসা এবং সিওকগুরামের মতো বৌদ্ধ মন্দির ও ধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিখ্যাত স্থানের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়৷
ভারতে বিশ্বের নবম বৃহত্তম বৌদ্ধ জনসংখ্যার দেশ। যার কারণে দেশটিকে জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশের কাতারে ফেলা যায়। এই দেশে আপনি ৭ মিলিয়নেরও বেশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাবেন।
দেশটিতে অধিক পরিমাণ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী বসবাস করার মূল কারণ হিসাবে জানা যায় প্রায় ২৬০০ বছর আগে দেশটিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন হওয়ার বিষয়টি।
তাছাড়া দেশটিতে মগধন সাম্রাজ্যের সময় বৌদ্ধধর্ম বিখ্যাত গৌতম বুদ্ধ দ্বারা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। উল্লেখ্য গৌতম বুদ্ধ শাক্য উপজাতির রাজপুত্র ছিলেন এবং তাঁর শিক্ষাই বৌদ্ধ ধর্মের মূল দর্শন গঠন করেছিলো।
পরবর্তীকালে, মৌর্য সাম্রাজ্যের সময়, বিশেষ করে অশোক রাজার রাজত্বকালে বৌদ্ধধর্ম বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই সময় আবার মূল বৌদ্ধ ধর্ম ভেঙ্গে ২ ভাগে বিভক্ত হতে শুরু করে। উক্ত ধর্ম ২ টি হলো:
জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশের তালিকায় সবশেষে আলোচনা করবো মালয়েশিয়ার কথা। মূলত ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মালয়েশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন শুরু হয়েছিল।
দেশটিতে বেশ কিছু বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। যা চীনা মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছিলো। অন্যদিকে দেশটির বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান স্কুল হলো মালয়েশিয়ার বৌদ্ধ নাগরিকের অনুসরণ করা প্রধান ধর্মীয় স্কুল।
এই ছিলো আমাদের আজকের এই জনসংখ্যায় শীর্ষ ১০টি বৌদ্ধ দেশের তালিকা। যেখানে আমরা বিশ্বের ১০ টি দেশের বৌদ্ধ ধর্মের প্রেক্ষিতে ধর্মীয় দিক নিয়ে আলোচনা করেছি।
বিভিন্ন তথ্য এবং উপাত্তের সাহায্য উক্ত ১০ টি দেশের বৌদ্ধ ধর্মের প্রেক্ষিতে ধর্মীয় দিকটিকে সুস্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি। আজকের মতো এতোটুকুই। পরবর্তীতে যেকোনো তথ্যবহুল আলোচনায় আমাদের সাথেই থাকুন।