ফজলে হাসান আবেদ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩
ফজলে হাসান আবেদ বিশ্ববিদ্যালয়

ফজলে হাসান আবেদকে মূল্যায়ন করা এভারেজ বাংলাদেশীর পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কারো দোষ দেই না। অন্ধ লোকে হাতির লেজ টেনেটুনে রায় দেয়, হাতি দেখতে দড়ির মতো। কানার হাটবাজারে বাকি কানারা সেই রায় শুনে বলে, হ, তুই ঠিক বলেছিস, সহমত ভাই; হাতি দেখতে দড়ির মতোই।

আমাদের স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশকে গড়ে তোলার পেছনে যেসব মানুষের অপরিসীম অবদান আছে, ফজলে হাসান আবেদ তাঁদের শীর্ষ তালিকার একজন। মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে একশন বাংলাদেশ তৈরি করে তিনি সরাসরি দেশের জন্য কাজ করেছেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে লন্ডনের বাড়ি বিক্রি করে একেবারে চলে এসেছেন দেশের কাজ করতে।

একটি যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া দেশে তিলেতিলে গড়ে তুলেছেন ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠান, যা আজ বিশ্বের সবচাইতে বড় এনজিও। কী পরিমান লিডারশিপ কোয়ালিটি থাকলে এত বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়, সেটি সবার বুঝে আসবে না। আমাদের চরম সৌভাগ্য যে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কিছু সোনার মানুষ পেয়েছিলাম, যারা তাঁদের নিজেদের কাজটুকু পরম মমতায় করে গিয়েছিলেন। আজকের দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে তাঁদের ভুমিকা অনেক। আজকের গ্রামীন জনপদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, হ্রাসকৃত শিশুমৃত্যুর হার, কৃষির সমৃদ্ধি সবকিছুতে তাঁদের কারো না কারো অবদান আছে।

জীবদ্দশায় এই মানুষগুলো তাঁদের মাতৃভূমিতে যোগ্য সম্মান পাননি। এমন না যে তাঁরা সম্মানের জন্য লালায়িত ছিলেন, তাঁরা এই সম্মান ও স্বীকৃতির অনেক উপরে। কিন্তু সত্য কথা হচ্ছে, আমরা তাঁদের মূল্যায়ন করতে পারিনি, তাঁদেরকে মূল্যায়ন করার মতো যোগ্যতাই তো আমাদের নেই।

রাষ্ট্রের উচিত ছিল বাংলাদেশের এইসব মানুষ, যারা বিভিন্নভাবে দেশ গঠনে কাজ করেছেন তাঁদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম করা। এতে করে যাদের নামে করা হবে তাঁরা মহিমান্বিত হবেন এমন নয়, বরং নামকরন করে আমরাই নিজেদের সম্মান বাড়াতে পারি।

ফজলে হাসান আবেদের কথাই বলি। বিশ্বের নামজাদা ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে। সেই তালিকায় আছে অক্সফোর্ড, কলম্বিয়া, ইয়েল, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠান। বাংলার কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট দেয়নি। প্রায় দুই ডজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার আছে, নাইটহুড আছে; কিন্তু দেশের কোন বড় পুরস্কার তাঁকে রাষ্ট্র দিয়েছে বলে স্মরণ পড়ে না।

আজ যদি ব্র্যাক তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম স্যার ফজলে হাসান আবেদের নামে করতে চায়, সরকারের উচিত হবে দ্রুত সেই প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া। অন্তত এতটুকু তো করা দরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ