মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের এক নারীকে মোটা অঙ্কের বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় এক দালাল গত বছরের ৫ আগস্ট সৌদি আরব পাঠায়। পরে সেখানে ওই নারীকর্মীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মেয়েকে ফিরে পেতে ওই নারীর মা রাবিয়া বেগম নিরুপায় হয়ে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
আজ শনিবার রাবিয়া বেগম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সিতার মিয়া ও তার স্ত্রী ছকিনা বেগমকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া পৌরসভার দক্ষিণ চাতলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আলম মিয়ার স্ত্রী নাজমা বেগমকে (২৮) সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখান জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সিতার মিয়া (৫৫)। বিষয়টি জানার পর নাজমা বেগমের পরিবার বারবার নিষেধ করলেও সিতার মিয়া বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর নাজমার কোনো সমস্যা হবে না এবং সমস্যা হলে পর দিন দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে তার পরিবার সৌদিতে পাঠাতে সম্মত হয়।
এরপর গত বছরের ৪ আগস্ট সকালে নাজমাকে বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে যান সিতার মিয়া। সেখান থেকে ৫ আগস্ট ঢাকা ফকিরাপুলে অবস্থিত ইস্টার্ন ট্র্যাভেলসের মাধ্যমে তাকে সৌদি আরব পাঠানো হয়। পরে তাকে সেখানে একটি বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে দেওয়া হলে তার ওপর বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের বিষয়টি নাজমা তার পরিবারের কাছে জানান। তখন সিতার মিয়াকে নাজমার মা মেয়েকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার অনুরোধ করেন। পরে নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সিতার মিয়া ও নাজমার পরিবারের লোকজন ১৭ আগস্ট ঢাকায় ওই ট্র্যাভেলসে যোগাযোগ করেন। সেখানে যাওয়ার পর নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তার পরিবার ঢাকা থেকে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফেরেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সিতার মিয়া বলেন,‘নাজমাকে সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য আমি শুধু ঢাকার ইস্টার্ন ট্র্যাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। পরে সেই ট্র্যাভেলসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। এরপর আমি কিছু বলতে পারব না। এখন নাজমাকে সৌদিতে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। সৌদিতে থাকা নাজমার কর্মস্থল তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেখানে একটি অফিসে কর্মরত রয়েছেন। এখন যদি তাকে দেশে আনতে হয় তাহলে ওই ট্র্যাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু নাজমার পরিবার সেটি না করে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মনগড়া অভিযোগ করছেন।’
কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক জানান, শনিবার রাবিয়া বেগম একটি অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, নির্যাতনের বিষয়টি রাবিয়া বেগম অফিসে এসে জানান। বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে তিনি আলাপ করেছেন। কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক তাকে জানান, এ বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। পরে তারা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।