কিং আব্দুল-আজিজ ইউনিভার্সিটিতে গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স, পিএইচডি) অ্যাপ্লিকেশন শুরু

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩
কিং আব্দুল-আজিজ ইউনিভার্সিটি

কিং আব্দুল-আজিজ ইউনিভার্সিটিতে গ্র্যাজুয়েট (মাস্টার্স, পিএইচডি) অ্যাপ্লিকেশন শুরু হয়েছে। অনেকেই অ্যাপ্লাই করতে ইচ্ছুক। আমি এখানকার বর্তমান ছাত্র। বর্তমান সুযোগ-সুবিধা এবং অ্যাপ্লাই করার নিয়মাবলী বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করছি। (প্রয়োজনীয় লিংক কমেন্টে দেয়া আছে)।

প্রথমেই জেনে নেয়া দরকার এখানকার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে। কারন অনেকেই সুযোগ-সুবিধা না জানার কারনে মিডল-ইস্টে আসতে আগ্রহী হয়না। আবার অনেকেই সঠিক ইনফরমেশন না জেনে আসার পর অতৃপ্তিতে ভুগতে পারেন। (জেনে রাখা ভালো, ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট অনেকসময় সময়মত ইনফরমেশন আপডেট করেনা। )

কী কী রয়েছে স্কলারশীপে?
– এখানে চান্স পাওয়া মানেই স্কলারশীপ। আপনি একটি ফুল ফান্ডেড স্কলারশীপ পাবেন, সাথে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা।
– মাস্টার্স/পিএইচডিতে আপনি প্রতি মাসে সর্বমোট ১৮৯০ রিয়াল স্টাইপেন পাবেন। (৮৯০ রিয়াল মাসের ২৭ তারিখ, বাকী ১০০০ রিয়াল পরবর্তী মাসের অন্য যেকোনো সময়)।
– আসার এয়ার টিকেট (সাধারণত পৌছানোর ৬ মাসের মধ্যে দেয় , আমরা ৪ মাসে পেয়েছি)।
– অবিবাহিতদের থাকার ব্যবস্থা। (তিন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে- থাকা যায়, ভালো, বেশ ভালো। এই তিন ধরনের যেকোনোটিই আপনার ভাগ্যে জুটতে পারে)।
– আসার পর ১৮০০ রিয়াল প্রিপারেশন অ্যালাউন্স।
– বই কেনার জন্য প্রতি বছর ৯০০ রিয়াল।
– ডিগ্রী শেষে বইপত্র দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২৭০০ রিয়াল।
– হোস্টেল থেকে ভার্সিটিতে ফ্রী যাতায়াত।
– ফ্রী মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এবং ওষুধপত্র।
– বছরে একবার দেশে যাওয়া-আসার টিকেট।

কী কী নাই স্কলারশীপে?
– বর্তমান ফ্যামিলি নিয়ে ফ্রীতে থাকার ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। ফ্যামিলি বাসার জন্য অ্যাপ্লাই করলে ২/৩ বছর সময়ও লেগে যেতে পারে বাসা পেতে। এছাড়া এখন ফ্যামিলি বাসার জন্য মাসিক ৫০০ রিয়াল পে করতে হচ্ছে।
– ফ্যামিলি নিয়ে শুরুতেই আসতে পারবেন না। আসার পর মিনিমাম ১ সেমিস্টার শেষ করে ফ্যামিলির জন্য ভিসার আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিজ খরচে বাইরে বাসা ভাড়ার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।
– নতুন ছাত্রদের শুরুতে ওমরায় নিয়ে যাওয়া হয়, এরপর অন্য সময় নিজ খরচে যেতে হয়। ভার্সিটির ফান্ড থাকা সাপেক্ষে কিছু ছাত্রদের বড় হজ্জ করার সুযোগ দেয়।
– এখানে এসে TA/RA হিসেবে কাজ করে অতিরিক্ত ইনকাম করার স্কোপ প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি। (লাইফ সায়েন্সের কিছু ডিপার্টমেন্টে সীমিত সুযোগ রয়েছে)
– এখানকার গবেষণার পরিবেশ ইউরোপ-আমেরিকার মত এতটা উন্নত না। যে ডিপার্টমেন্টে আসতে চান, অবশ্যই ভালোমতো জেনে এরপর আবেদন করবেন।
– রিসার্চ ফান্ড সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি যার সাথে কাজ করছেন, তার সাথে আপনার ডিলিং কেমন তার উপর। এখানে ডিফল্ট কোনো ফান্ড নাই, এজন্য আপনাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে।
– ডিগ্রী শেষ করে সৌদি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এখানে বাংলাদেশী হিসেবে জব পাওয়ার স্কোপ নাই বললেই চলে। আর পেলেও ডিগ্রী শেষ করে, ভিসা টাইপ পরিবর্তন করে আবার আসতে হবে। যেটা হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।
– সবকিছুর দাম বাড়ায় এবং সৌদির অবস্থা আগের চেয়ে পরিবর্তন হওয়ায় এখানে এখন সাবসিডি দিয়ে খাবার দেয়না। মোটামুটি আসল দামেই ক্যান্টিন থেকে কিনে খেতে হয়।

এখান থেকে সিদ্ধান্ত নেন আপনি আবেদন করবেন কিনা। আপনার ক্যারিয়ার গোল এবং চিন্তাধারার উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করবে বাকীটা।

এবার আসি অ্যাপ্লিকেশন করার প্রসেসে।

কী কী প্রয়োজন অ্যাপ্লাই করতে?
– IELTS Score (5.5 Minimum, better if more)
– Recommendation Letter (2 from your former supervisor or teacher)
– Updated Resume
– Statement of Purpose (Good one)
– Valid Passport
– Certificate and Transcript (Attestation not required initially)
– Photo
– No fee is needed

কিভাবে অ্যাপ্লাই করবো?
আমি বিশ্বের অনেক ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই করেছি। এর মধ্যে কিং আব্দুল-আজিজে অ্যাপ্লাই করা সবচেয়ে সহজ মনে হয়েছে। তাই কোনো এজেন্সীর কাছে যাওয়ার দরকার নাই, নিজেই ঘরে বসে অ্যাপ্লাই করুন। একাউন্ট ক্রিয়েটের লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি।

কোন কোন প্রোগ্রামে আবেদন করা যাবে?
এটার একটা লিস্ট কমেন্ট সেকশনে দিয়ে দিচ্ছি। লিস্টটা মেয়েদের পোর্টাল থেকে নেয়া। ছেলেদের ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই প্রোগ্রামগুলো অ্যাভেইলেবল।

কতদিন লাগে প্রসেস হতে?
এইটা এমন একটা প্রশ্ন, যার আসলে সঠিক কোনো উত্তর নাই। আমি এসেছি দেড় বছরের মাথায়, আমার সাথে একজন এসেছে ৮ মাসের মাথায়। এসে শুনছি অনেকে ৩ বছর অ্যাপ্লাই করে রেখেছে, এখনো পেন্ডিং। এখানে অনেকগুলো প্রসেস মেইনটেইন হয়ে ফাইনালি ভিসা প্রসেস হয়। গ্র্যাজুয়েট অফিস- ডিপার্টমেন্ট- ইজুকেশন মিনিস্ট্রি- ফরেন অ্যাফেয়ার্স- এরপর ভিসা। কোথায়, কখন স্টাক হয়ে যায় বলা মুশকিল। তবে অ্যাভারেজ এক থেকে দেড় বছর লাগবেই।

মেয়েদের চান্স পাওয়ার সম্ভবনা কতটুকু?
বর্তমান পলিসি অনুযায়ী মেয়েরা মাহরাম ছাড়াও আবেদন করতে পারবে। তবে বলে রাখা ভালো, মাহরাম ছাড়া এখানকার জীবনযাপন বেশ কষ্টসাধ্য। এছাড়া মাহরাম ছাড়া অ্যাডমিশন পেতেও এখন অতিরিক্ত সময় লাগবে বলে মনে করছি। কারন মেয়েদের হোস্টেলের সংকট রয়েছে।

কতদিন পর্যন্ত আবেদন করা যাবে?
সাধারনত মার্চ মাসের দিকে পোর্টাল বন্ধ হয়। তবে আগে বা পরেও শেষ হতে পারে। নির্দিষ্ট ডেডলাইন জানা নাই।
এই ইনফরমেশনগুলোই আপাতত জানানো প্রয়োজন মনে করেছি। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি এখানে আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। এর বাইরে কিছু জানার থাকলে বা মতামত জানতে চাইলে আমাকে মেইল করতে পারেন- sanzid.me@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ