চীন পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার দেশ। যেখানে রয়েছে বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য গ্রেট ওয়াল থেকে শুরু করে আধুনিক শহরের আকাশচুম্বী বিল্ডিং, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের অপূর্ব সমন্বয়। তাই আপনার যদি চীন ট্যুর দেওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে বলবো টাকা এবং সময় কোনোটাই অপচয় হবে না। আর এই ট্যুর সফল করতে দরকার বেস্ট কিছু চীনের দর্শনীয় স্থান। যা নিয়ে বিস্তারিত জানুন আমাদের আজকের আর্টিকেলে।
চীনের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। এই গ্রেট ওয়াল অব চায়না প্রায় ২১,১৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ইতিহাসের অন্যতম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ধারণা করা হয় এই ওয়াল ২০০০ বছরেরও বেশি পুরনো এবং প্রাচীন চীনা সভ্যতার প্রতীক। আর এর লোকেশন হলো বেইজিং থেকে ৭০ কিমি দূরে, বাদালিং এবং মুতিয়েনইউয়ে।
যারা গ্রেট ওয়াল অব চায়না দেখতে চান তাদের কিন্তু টিকিট কাটতে হবে। এক্ষেত্রে এর প্রাইজ পড়বে প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ টাকার মতো। আর হ্যাঁ এখানে মার্চ থেকে মে অথবা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়ে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো।
চীনের সম্রাটদের প্রাচীন প্রাসাদ এবং বেইজিংয়ের সবচেয়ে আইকনিক স্থান হলো এই ফর্বিডেন সিটি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই জায়গা একসময় সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তাই সময় গড়িয়ে এর নাম হয়েছে ফর্বিডেন সিটি। বেইজিং শহরের কেন্দ্রে গিয়ে মাত্র ৭০০-১০০০/- খরচ করলেই আপনি এর টিকিট পেয়ে যাবেন।
এখানে আপনি দেখতে পাবেন, ৯৮০টি ভবন এবং প্রায় ৮,০০০ কক্ষ। সবগুলোই প্রাচীন চীনা স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। যেহেতু সকাল ৯টার আগে গেলে কম ভিড় থাকে সেহেতু ভোরের কিছুটা পরে এখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়তে পারেন।
চীনের প্রথম সম্রাট চিন শি হুয়াং। যার কবর রক্ষার জন্য একসময় তৈরি করা হয়েছে হাজার হাজার টেরাকোটা সৈন্যের ভাস্কর্য। এই ট্যুর স্পটের লোকেশন হলো শিয়ান শহরে। আর টিকিট প্রাইজ পড়বে ৯০০-১২০০/- মতো।
প্রতিটি ভাস্কর্যের মুখের এক্সপ্রেশন আলাদা বলে এটিকে অবিশ্বাস্য শিল্পকর্ম হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। এখানে যদি গাইড নিয়ে ঘুরতে পারেন তবে এর ইতিহাস বুঝতে অনেকটাই সহজ হবে।
ঝাংজিয়াজে ন্যাশনাল ফরেস্ট পার্ক মূলত চীনের এমন একটি দর্শনীয় স্থান, যেখানে গেলে আপনার মনে হবে আপনি কোনো ফ্যান্টাসি সিনেমায় ঢুকে পড়েছেন। অ্যাভাটার সিনেমার পাহাড়গুলোর মতো করে এই পার্ক ডিজাইন করা হয়েছে।
এখানে যেতে হলে আপনাকে চীনের হুনান প্রদেশে যেতে হবে এবং টিকিট কিনতে হবে ২৫০০/৩০০০/- খরচ করে৷ এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন বিশ্বের দীর্ঘতম কাচের ব্রিজ এবং সেই সাথে হাজার ফুট উঁচু স্যান্ডস্টোন পিলার। এপ্রিল থেকে অক্টোবর সময়ে গেলে এই জায়গায় অনেক বেশি এনজয় করতে পারবেন।
চীনের ইয়াংজি নদী এশিয়ার দীর্ঘতম নদী এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। ক্রুজে ভ্রমণ করলে আপনি চীনের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে এখানে ঘোরার খরচটা একটু বেশি। এখানে আপনাকে মোটামুটি ৭০০০-১৫০০০/- গুনতে হবে। এই টাকা দিয়ে আপনি ইজিলি উপভোগ করতে পারবেন থ্রি গর্জেস এবং এই নদীর তীরের গ্রাম এবং পাহাড়।
তিব্বতের রাজধানী লাসায় অবস্থিত এই প্রাসাদটি অবস্থিত। যা বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচিত হয়। এখানকার টিকিট মূল্য প্রায় ২০০০/-। ৩,৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই দর্শনীয় স্থানটি প্রাচীন তিব্বতীয় স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন।
চীনের সবচেয়ে আধুনিক এবং আকাশচুম্বী ভবনের মধ্যে সাংহাই টাওয়ার অন্যতম। যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভবন। কারণ এর উচ্চতা ৬৩২ মিটারেরও বেশি।
এখানকার টিকিট প্রাইজ ১২০০-১৫০০ টাকা মাত্র। ১১৮ তলা থেকে পুরো সাংহাই শহর এক নজরে দেখার জন্য হলেও আপনার এখানে ঘোরা উচিত। তাছাড়া সূর্যাস্তের সময় গেলে তো কথাই নেই।
বিজনেস এবং পর্যটন দুটোতেই গুয়াংজু বিখ্যাত। আর ক্যান্টন টাওয়ার গুয়াংজুর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। যার উচ্চতা প্রায় ৬০০ মিটার। এখানকার খরচও কম। মানে ৯০০-১২০০ টাকাতে হয়ে যাবে। এখানকার স্কাই ড্রপ রাইডসহ রাতের দারুণ লাইটিং আপনার অনেক ভালো লাগবে।
এটি চীনের প্রথম বৌদ্ধ মন্দির এবং বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যার অবস্থান লুওইয়াং শহর। এবং এই জায়গার টিকিট মূল্য ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো।
মোটকথা চীনের দর্শনীয় স্থানগুলি একটির চাইতে অন্যটি সেরা। তবে প্রতিটি দর্শনীয় স্থান ঘোরার আগে টিকিট অনলাইনে বুক করলে সময় বাঁচবে। তাছাড়া মনে রাখতে হবে মার্চ থেকে মে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর চীন ভ্রমণের সেরা সময়। সবশেষে বলবো হালাল খাবারের জন্য আগেভাগে গুগল ম্যাপে সার্চ করে নেবেন। পাশাপাশি দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে প্রতিদিনের বাজেট ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা ধরে রাখবেন।।