চীন, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা এবং বর্তমান সময়ের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস, দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অনন্য স্থাপত্য আর সুস্বাদু খাবারের জন্য চীন বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের স্বপ্নের গন্তব্য।
তবে বাংলাদেশ থেকে চীন ভ্রমণে শুধু ইচ্ছা থাকলেই হবে না। বরং এক্ষেত্রে আগে থেকে সঠিক পরিকল্পনা এবং গাইডলাইন থাকা খুব জরুরি।
আজকের এই গাইডে আমি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করব কিভাবে বাংলাদেশ থেকে চীন ভ্রমণ করবেন। সাথে থাকবে ভিসা, ফ্লাইট, খরচ, থাকার ব্যবস্থা, খাবার, দর্শনীয় স্থান সব কিছু নিয়ে ডিটেইলড আলোচনা।
চীন এমন একটি দেশ যেখানে ভ্রমণের প্রতিটি শহর যেন আলাদা আলাদা স্পেশালিটি রাখে।
যেমন ইতিহাস ও স্থাপত্য যাদের ভালো লাগে তারা গ্রেট ওয়াল অব চায়না, ফর্বিডেন সিটিতে ঘুরতে যেতে পারে৷ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাদের ভালো লাগে তারা ঝাংজিয়াজে ন্যাশনাল ফরেস্ট, হলুদ নদী বা ইয়াংজি নদীতে যেতে পারেন৷
শপিং এবং বিজনেস যাদের ভালো লাগে তারা বেছে নিতে পারেন গুয়াংজু, শেনজেন, সাংহাই। সুস্বাদু খাবার হিসাবে ট্রাই করতে পারেন নুডলস, ডাম্পলিং এবং অসংখ্য হালাল খাবার।
মোটকথা চীন এমন একটি দেশ যেখানে ভ্রমণ মানে শুধু চোখে দেখাই নয়৷ বরং হৃদয় দিয়ে সবকিছু অনুভব করা।
চীনে যেতে হলে ভিসা অবশ্যই লাগবে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য দুই ধরণের ভিসা আছে। যেমন:
ট্যুরিস্ট ভিসা বা L ভিসা: যারা শুধুমাত্র ঘুরতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এই ভিসা। যার মেয়াদ থাকবে ৩ মাস আর প্রবেশের সংখ্যা একবার মানে Single Entry। এই ভিসার খরচ পড়বে ৬,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকার মতো।
বিজনেস ভিসা বা M ভিসা: যারা ব্যবসার কাজে চীনে যাচ্ছেন তাদের জন্য এই ভিসা। এই ভিসার দাম মূলত ৮,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকার মতো।
ঢাকা থেকে চীনের সরাসরি কানেক্টিং ফ্লাইট পাওয়া যায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট হলো ঢাকা টু গুয়াংজু। এক্ষেত্রে ইকোনমি ক্লাসে রিটার্ন টিকিটের প্রাইজ ৩৮,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা। আর বিজনেস ক্লাসে রিটার্ন টিকিটের খরচ ৯০,০০০ থেকে ১,৩০,০০০ টাকা।
মনে রাখবেন এক্ষেত্রে টিকিট যত আগে বুক করবেন, দাম তত কম হবে। তাছাড়া বাংলাদেশ বিমান, চায়না সাউদার্ন, কাতার এয়ারওয়েজ ভালো অপশন হবে।
চীনে হোটেলের খরচ শহর এবং লোকেশন অনুযায়ী ভিন্ন হবে। তবে বাজেট হোটেলের খরচ প্রতি রাত ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা, মিড-রেঞ্জ হোটেলের খরচ প্রতি রাত ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা এবং লাক্সারি হোটেলের খরচ প্রতি রাত ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পড়বে।
মনে রাখবেন, গুয়াংজু বা শেনজেনে গেলে ট্রেড সেন্টারের কাছে হোটেল নেওয়া ভালো। আর হোটেল বুকিং এর জন্য Booking.com বা Agoda ব্যবহার করতে পারেন। নিরাপত্তার জন্য হোটেলের রিভিউ অবশ্যই ভালো করে দেখে নেবেন।
চীনের খাবারের বৈচিত্র্য কিন্তু অসাধারণ। তবে হালাল খাবারের জন্য কিছুটা খোঁজখবর রাখতে হবে। এক্ষেত্রে লোকাল রেস্টুরেন্টে প্রতি মিল ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা হতে পারে। আর হালাল রেস্টুরেন্টে প্রতি মিল ৮০০ থেকে ১,৫০০ টাকার মতো হবে। সবশেষে যদি ফাস্টফুড খান সেক্ষেত্রে প্রতি মিল ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা বাজেট করবেন৷
ও হ্যাঁ! গুয়াংজু ও শেনজেনে কিন্তু বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট আছে। Muslim Restaurant লিখে গুগল ম্যাপে সার্চ করলে এর লোকেশন পেয়ে যাবেন। পাশাপাশি ট্যুরের সময় পানি বোতলজাত অবস্থায় কিনুন! ট্যাপ ওয়াটার পান করবেন না।
চীনের শহরগুলোতে লোকাল ট্রান্সপোর্টের চমৎকার ব্যবস্থা আছে। যেখানে মেট্রো প্রতি রাইড ৭০ থেকে ২০০ টাকা, বাস প্রতি রাইড ৫০ থেকে ১৫০ টাকা, ট্যাক্সি প্রতি কিলোমিটার ২০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো। তবে দেশটিতে মেট্রো সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং নিরাপদ। তাছাড়া মেট্রো কার্ড নিলে খরচ কমে যাবে। পাশাপাশি WeChat বা Alipay দিয়ে পেমেন্ট করলে আপনার জন্য পে করাটা সহজ হবে।
চীন ভ্রমণের আগে থেকে প্ল্যান করে রাখলে ভালো। এতে খরচ কমবে। তাছাড়া ভিসা ডকুমেন্ট ঠিক করে রাখা জরুরি। কারণ কোনো ভুল থাকলে ভিসা রিজেক্ট হতে পারে। সবশেষে বলবো চীনে যাওয়ার আগে WeChat ডাউনলোড করে রাখবেন। এবং হালাল খাবারের জন্য গুগল ম্যাপ ব্যবহার করবেন। আশা করি প্রায় ৮৫,০০০ থেকে ২,৩০,০০০ টাকার মধ্যে আপনার এই চীন ভ্রমণ ৭/৮ দিনের মতো ইজিলি যাবে।