সুইজারল্যান্ডে বোরকা পরলেই লাখ টাকা জরিমানা, হচ্ছে কঠোর আইন

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২

 

ঘরের বাইরে বোরকা-নিকাব পরলে এক হাজার সুইস ফ্রাঁ পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে একটি আইন করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় জরিমানার পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ টাকার মতো।

খসড়া আইনটি গত বুধবার (১২ অক্টোবর) পার্লামেন্টে পাঠিয়েছে সুইস সরকার। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, মুখ ঢাকায় নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য, জনগণের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। শাস্তিই আসল নয়।

এর আগে, গত বছর গণভোটের সিদ্ধান্তে জনসম্মুখে মুখ ঢেকে চলাচল নিষিদ্ধ করে সুইজারল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবে এটি ‘বোরকা ব্যান’ বা বোরকা নিষিদ্ধকরণ নামে পরিচিত। এই সিদ্ধান্ত ইসলামবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক বলে অভিযোগ থাকলেও ওই গণভোটে দেশটির ৫১ দশমিক ২ শতাংশ ভোটার বোরকা-নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দেন।

শুরুর দিকে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে, অর্থাৎ জনসম্মুখে বোরকা-নিকাব পরলে তা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার ফ্রাঁ (১০ লাখ টাকা প্রায়) জরিমানার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনার পর জরিমানার পরিমাণ কমিয়ে এক হাজার ফ্রাঁ করার প্রস্তাব দিয়েছে সুইস মন্ত্রিসভা।

কী থাকছে আইনে

সুইজারল্যান্ডে মুখ ঢেকে রাখা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ শুরু করেছিল ‘এগারকিঙ্গার কোমিটি’ নামে একটি সংগঠন। উগ্র ডানপন্থি দল সুইস পিপলস পার্টির বহু রাজনীতিবিদ এর সদস্য। তাদের দাবি, ‘সুইজারল্যান্ডে রাজনৈতিক ইসলামের ক্ষমতার দাবির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ গড়া সংগঠনটির মূল লক্ষ্য।

বুধবারের বিলে সরাসরি বোরকা বা নিকাবের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে গণপরিবহন, রেস্তোরাঁ বা রাস্তার মতো উন্মুক্ত স্থানগুলোতে মুখ ঢেকে চলাফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে চোখ, নাক ও মুখ অবশ্যই দৃশ্যমান থাকতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে বিলটিতে।

উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম নারীরা হিজাব পরে চুল ঢাকতে পারবেন। কিন্তু নিকাব বা বোরকা পরে মুখ ঢাকতে পারবেন না। তবে প্রার্থনার স্থান বা মসজিদে এগুলো পরা যাবে।

অবশ্য প্রস্তাবিত আইনে কিছু ব্যতিক্রম বা ছাড় থাকছে। এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা, জলবায়ু বা স্বাস্থ্যগত কারণে মুখ ঢেকে চলাচল করা যাবে। অর্থাৎ করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মানুষজনকে মাস্ক পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

মুসলিম সংগঠনগুলো শুরু থেকেই এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে আসছে। সুইজারল্যান্ডের ফেডারেশন অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন বলেছে, সংবিধানে ড্রেস কোড অন্তর্ভুক্তি নারীদের জন্য মুক্তির সংগ্রাম নয়, বরং অতীতে ফিরে যাওয়া একটি ধাপ। এই বিতর্কে নিরপেক্ষতা, সহনশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সুইস মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।

সুইজারল্যান্ডের প্রায় ৮৬ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে পাঁচ শতাংশ মুসলিম। এর অধিকাংশই তুরস্ক, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং কসোভো থেকে যাওয়া নাগরিক।

সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের অন্তত ছয়টি দেশে বর্তমানে মুখ ঢেকে চলাচল অর্থাৎ বাইরে বোরকা পরা নিষিদ্ধ। ফ্রান্সে ২০১১ সাল থেকে জনসমক্ষে মুখঢাকা বোরকা পরা নিষিদ্ধ। এছাড়া ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস ও বুলগেরিয়ায় জনসমক্ষে মুখ ঢাকায় পুরোপুরি বা আংশিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মুখের পর্দা নিষিদ্ধকরণকে ‘মতপ্রকাশ ও ধর্মীয় স্বাধীনতাসহ নারীর অধিকার লঙ্ঘনকারী একটি বিপজ্জনক নীতি’ বলে অভিহিত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ