সৌদির এআই ল্যাবের প্রধান গবেষক হলেন এহসান হক

প্রবাস প্রতিদিন
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩
সৌদি আরবে নিজের অফিসে এহসান হক
সৌদি আরবে নিজের অফিসে এহসান হক

সৌদি আরবের জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান গবেষক হিসেবে যোগ দিলেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক এহসান হক। সৌদি সরকারের তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাকেন্দ্র সাডায়ায় কাজ করবেন তিনি। সাডায়ার পূর্ণরূপ সৌদি ডেটা অ্যান্ড এআই অথোরিটি। অর্থাৎ সৌদি তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাডায়ার লক্ষ্য সৌদি আরবকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বের অন্যতম শক্তিতে পরিণত করা। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি বা চালিকাশক্তির নাম তথ্য। এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী পরাশক্তি হয়ে ওঠার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে ইতিমধ্যেই ২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। ২০৩০ সালে এটি ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এহসান হক বলেন, লক্ষ্য অর্জনে সময়োপযোগী নীতিমালা, কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে তিনি নেতৃত্ব দেবেন সৌদির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক সব রকম গবেষণা ও উন্নয়নে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুষম এবং নৈতিক প্রয়োগ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র—যেমন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, ধর্ম, জলবায়ুসহ অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে কীভাবে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করবেন তাঁরা।

‘আমার ইচ্ছা আছে জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ের কাজগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য লেখালেখি করব। তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত করব।

এহসান হক, বিজ্ঞানী ও গবেষক

বাংলাদেশি এই গবেষক বিজ্ঞানচিন্তাকে বলেন, ‘বিজ্ঞানের প্রয়োগ শুধু উদ্ভাবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের নৈতিক ব্যবহার, নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং বাস্তব ধর্মী প্রশিক্ষণের দায়িত্বও বিজ্ঞানীদের ওপরেই বর্তায়। কিন্ত প্রশ্ন হলো, একজন শিক্ষাবিদ বা বিজ্ঞানী তাঁর চিরাচরিত  স্বাচ্ছন্দ্য  থেকে দূরে সরে অন্য কিছু কেন করবেন? আর করবেনই-বা কী করে—নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ তো খুব সীমিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যাঁরা নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কাজ করেন, তাঁদের বেশিরভাগও ঠিক একইভাবে বিজ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন। তাহলে বিজ্ঞান ও নীতিমালার সঠিক সংমিশ্রণ কী করে সম্ভব? সেই তাড়না থেকেই আমি এই নতুন ভুমিকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ইচ্ছা আছে জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা ও বিজ্ঞানের সমন্বয়ের কাজগুলো সম্পর্কে বাংলাদেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের জন্য লেখালেখি করব। তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত করব। চেষ্টা করব যেন তাঁরা ভবিষ্যতের এই অতিপ্রয়োজনীয় কাজগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন।’

এহসান হক ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গুগল ফ্যাকাল্টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিন তাঁকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একজন উদীয়মান পথপ্রদর্শক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

এহসান হকের জন্ম ঢাকায়, ১৯৮১ সালে। ছোটবেলায় পড়াশোনা করেছেন ঢাকার উদয়ন স্কুলে। সালে। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে স্নাতকের জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। পেন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ইউনিভার্সিটি অব মেমফিস থেকে মাস্টার্স করেছেন ২০০৭ সালে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির মিডিয়া ল্যাব থেকে পিএইচডি ও গবেষণা। উদ্ভাবন করেছেন ম্যাক ও লিসা নামের দুটি কম্পিউটার সিস্টেম। সেগুলো মুখভঙ্গি দেখে মানুষের কথা বুঝতে পারে। ২০১৬ সালে এমআইটি টেক রিভিউ ৩৫ বছরের কম বয়সী বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে ভূষিত করে তাঁকে। ২০১৭ সালে সায়েন্স নিউজ তাঁকে ‘টেন সায়েন্টিস্ট টু ওয়াচ’ হিসাবে চিহ্নিত করে।

এহসান হক ২০১৪, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গুগল ফ্যাকাল্টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিন তাঁকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একজন উদীয়মান পথপ্রদর্শক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন এহসান হক। ছুটি নিয়ে বর্তমানে নতুন দায়িত্ব, সৌদি আরবের সাডায়ার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন তিনি।

তথ্য বিজ্ঞান চিন্তা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ