অনেকে এ অবস্থায় হয়ত ভাগ্যকে দোষারোপ করে পরনির্ভরশীল জীবন মেনে নিতেন ৷ কিন্তু মাজিদ তা করেননি ৷ এক পা হারালেও হতাশায় না ডুবে নেমে পড়েছেন সুইমিং পুলে। অনেক গাজাবাসীর কাছেই মাজিদ তাই অনন্য এক মানুষ৷
মাজিদের বয়স তখন ১৫ বছর। সব শিশুর মতো তারও তখন ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগে ৷ কিন্তু এক বেপরোয়া গাড়ি তাকে রাস্তা থেকে সোজা পাঠিয়ে দিলো হাসপাতালে ৷ গাড়ির চাকায় গুঁড়িয়ে যাওয়া ডান পা রক্ষার অনেক চেষ্টা করেছেন ডাক্তাররা। কিন্তু লাভ হয়নি ৷
৪২ বছরের জীবনে মাজিদ অনেক দেখেছেন, শিখেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শিখেছেন পা হারিয়ে স্বপ্নহারা হওয়ার সেই সময়ে রয়টার্সকে সাফল্যের মূল মন্ত্র সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেই কথাই স্মরণ করেছেন মাজিদ, ” (পা কেটে ফেলার পর) আমি নিজেকে বলেছিলাম, (এক পায়ে চলার) এই অগ্নিপরীক্ষাকে আশীর্বাদে পরিণত করতে হবে। তারপর পা কেটে ফেলাকেই সমাজে নিজেকে সক্রিয় মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রেরণা করে ফেলি।”
বদলে যাওয়া জীবন সাঁতার জানতেন মাজিদা কিন্তু এক পা কেটে ফেলার পর কি আর সাঁতরানো যায়? মাজিদ প্রমাণ করেছেন শুধু সাঁতরানো নয়, এক পা নিয়ে সাঁতারে খুব দক্ষ হওয়া যায়, দক্ষ হয়ে কোচও হওয়া যায়। সকাল-সন্ধ্যা অনুশীলন করে ভালো সাঁতারু হওয়ার পর তাই গাজায় প্যালেস্টিনিয়ান সুইমিং অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছেন মাজিদ এল-তাতার।
রেড ক্রস বলছে, গাজার কমপক্ষে ১৬০০ মানুষের একটা বা দুটো পা-ই নেই। আস্সালামা চ্যারিটেবল সোসাইটি নামের এক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের হিসেব অনুযায়ী, গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে অন্তত ৫৩২ জন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের কারণে ৷ দুর্ঘটনা বা সংঘাতের কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করা প্রতিটি মানুষ এখন জীবনযুদ্ধে শামিল ৷ মাজিদ এল-তাতার সবার কাছেই এখন অসহায়ত্বকে শক্তিতে পরিণত করার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷
গাজার এক সুইমিং পুলে সাঁতার শেখান মাজিদ এল-তাতারা শুরুতে অনেক বাবা-মা তার কাছে সন্তানদের পাঠাতে চাইতেন না, ভাবতেন, এক পা নিয়ে মাজিদ খুব চেষ্টা করলেও ভালো সাঁতার শেখাতে পারবেন না। কিন্তু বেশিদিন এই সংশয় থাকেনি৷ ফলে ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে মাজিদের অ্যাকাডেমিতে। এখন শুধু সন্তানরা নয়, কোনো কোনো সন্তানের বাবাও যান সাঁতার শিখতে।
সূত্র ডয়চে ভেলে