১. জোরপূর্বক কেউ কোনো কিছু খাইয়ে দিলে।
২. রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্থায় গোসল কিংবা কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতরে পানি প্রবেশ করলে। নাকে পানি দেওয়ার সময় ওপরের দিকে শ্বাস টানার ফলে মস্তিষ্কে কিংবা কণ্ঠনালিতে পানি পৌঁছে গেলে। তাই রোজা অবস্থায় ওজু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করবে না।
লাকিত ইবনে সাবিরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘(ওজু-গোসলের সময়) ভালোভাবে নাকে পানি দাও, তবে রোজা অবস্থায় নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩ সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭৮৫)
সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন, ‘রোজা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে এবং তা কাজা করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ৭৩৮০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ৯৮৪৪-৯৮৪৭; ফাতাওয়া শামি ২/৪০১ ফাতাওয়া আলমগিরি ১/ ২০৩)
৩. ইচ্ছাকৃত কংকর, পাথরের টুকরা, মাটি অথবা কাগজের টুকরো গিলে ফেললে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র) ও ইকরিমা (রহ) বলেন, ‘(পেটে) কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যায়। কোনো কিছু বের হওয়ার দ্বারা রোজা ভাঙে না।’ (সহিহ বুখারি ১/২৬০ (তালিক); বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৪১০ ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২০৩)
৪. দাঁতের ভেতর আটকে থাকা বস্তু বের করে খেয়ে ফেললে, যদি তা বুট পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয়, তা হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি মুখ থেকে বের করে আবার খেয়ে ফেলে তা হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। চাই বুট পরিমাণের চেয়ে কম হোক বেশি হোক। (আলমগিরি ১/২০২ রদ্দুল মুহতার ৩/৩৬৮)
৫. অপরের থুতু গিলে ফেললে অথবা নিজের থুতু বের করে হাতে রেখে আবার তা খেয়ে ফেললে।
৬. দাঁত থেকে বের হওয়া রক্ত গিলে ফেললে, যদি তা থুতু বরাবর বা তার চেয়ে বেশি হয়। (আলমগিরি ১/২০৫)
৭. ইচ্ছাকৃত মুখভরে বমি করলে অথবা মুখে বমি আসার পর ইচ্ছাকৃত তা গিলে ফেললে। (আলমগিরি ১/২০৪)
৮. স্ত্রীকে স্পর্শ, চুম্বন বা আলিঙ্গন করার ফলে বীর্যপাত হলে। (আলমগিরি ১/২০৫)
৯. ভুলে কোনো কিছু আহার করে রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরায় আহার করলে। (ফাতাওয়া আলমগিরি ১/২০৬)
১০. সুবহে সাদিক হয়নি মনে করে সেহরি খেল অথবা স্ত্রী সঙ্গম করল তার পর জানতে পারল যে ওই সময় সুবহে সাদিক হয়ে গিয়েছিল। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৮০) তেমনি ইফতারির সময় হয়ে গেছে ভেবে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করে নিলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
আউন (রহ) থেকে বর্ণিত, মুহাম্মাদ ইবনে সিরিন (রহ) রাত্র বাকি আছে ভেবে সেহরি খেলেন। তার পর জানতে পারলেন, তিনি সুবহে সাদিকের পর সেহরি করেছেন তখন তিনি বললেন, ‘আমি আজ রোজাদার নই।’ (অর্থাৎ আমাকে এ রোজার কাজা করতে হবে)। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/১৪৯)
১১. হস্তমৈথুনে বীর্যপাত হলে রোজা ভেঙে যাবে। আর এটা যে ভয়াবহ গুনাহের কাজ তা বলাই বাহুল্য। (সহিহ বুখারি ১/২৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭২; ফাতাওয়া শামি ২/৩৯৯)
১২.রোজা অবস্থায় হায়েজ বা নেফাস শুরু হলে রোজা ভেঙে যাবে। পরে তা কাজা করতে হবে।
আবু সাঈদ খুদরি (রা) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহায় নারীদের লক্ষ্য করে বললেন-নারীরা তো ঋতুস্রাবের সময় রোজা রাখতে পারে না এবং নামাজও পড়তে পারে না। এটা তোমাদের দ্বীনের অসম্পূর্ণতা। (সহিহ বুখারি ১/৪৪; শরহু মুখতাসারিত তহাবি ২/৪৪০; আননুতাফ ফিল ফাতাওয়া ১০০)
১৩.পেটের ক্ষতে ওষুধ লাগালে রোজা ভেঙে যাবে, যদি ওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। বিশেষ প্রয়োজনে এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে পরে সে রোজা কাজা করে নিতে হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
১৪. নাকে ওষুধ বা পানি দিলে তা যদি গলার ভেতরে চলে যায় তা হলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা করতে হবে।
১৫.মলদ্বারের ভেতর ওষুধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৪; রদ্দুল মুহতার ২/৪০২)
♥ মুফতি সাদেকুর রহমান